চিকিৎসক নেই, অসুখে ভরসা ওঝা-বৈদ্য

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। এ কারণে রোগীরা স্থানীয় ওঝা ও বৈদ্যদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটিতে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন চিকিৎসক, একজন উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন এমএলএসএস থাকার কথা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র—বাঘাইছড়ি, সারোয়াতলী ও খেদারমারায় কাগজে-কলমে চিকিৎসক থাকলেও তাঁরা কর্মস্থলে যান না। তাঁরা দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। বাকি চারটি কেন্দ্র—রূপকারী, বঙ্গলতলী, মারিশ্যা ও সাজেকে চিকিৎসকের পদই শূন্য। এদিকে খেদারমারা, মারিশ্যা ও বাঘাইছড়িতে উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলেও তাঁরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান না, অফিস করেন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নূয়েন খীসা বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর মধ্যে সাজেক ও সারোয়াতলীর দুটি কেন্দ্রে অবকাঠামো রয়েছে। বাকি পাঁচ ইউনিয়নে কোনো অবকাঠামো নেই। সে জন্য চিকিৎসকেরা কর্মস্থলে থাকতে চান না। যে তিনজন চিকিৎসক রয়েছেন তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।
সাজেক ইউনিয়নের ওল্ড লংকর মৌজার প্রধান (হেডম্যান) নূর থাংকিনা পাংখোয়া বলেন, ‘আমার গ্রামে ১০ বছর আগে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু কখনো চিকিৎসক আসেননি। বর্তমান ক্লিনিকটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এখানকার মানুষ অসুখ-বিসুখে ওঝা ও বৈদ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।’
খেদারমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘শুনেছি তিন বছর আগে আমার ইউনিয়নে একজন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর দেখা পাইনি। হাজারো মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর দাতা সংস্থা ও স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে দুর্গম এলাকায় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হতো। দেড় থেকে দুই বছর ধরে দাতা ও উন্নয়ন সংস্থা চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর থেকে উপজেলার অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেলশন চাকমা জানান, দাতা ও উন্নয়ন সংস্থা চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেওয়ায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকায় কেউ অসুস্থ হলে ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি যেতে হচ্ছে রোগীদের। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবাই।