এক যুগ পার, তবু শেষ হয়নি তদন্ত

.
.

এক যুগেও বগুড়ার শেরপুরে সাংবাদিক দীপংকর চক্রবর্তী (৫২) হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এর মধ্যে তিনবার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে মামলাটি শেষ করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিবারই আদালত তা নাকচ করে দিয়ে পুনঃ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এই সময়ের মধ্যে থানা-পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) পাঁচ দফা মামলাটির নথি হাতবদল হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হয়েছেন ১০ জন। সর্বশেষ ২৭ অক্টোবরের মধ্যে মামলাটির তদন্ত শেষ করার তাগিদ দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর আদালত এই নির্দেশ দেন।
দীপংকর চক্রবর্তীর পরিবার ও সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাদের অভিযোগ, শুরু থেকেই মামলাটির তদন্তে পুলিশের গাফিলতি ছিল।
২০০৪ সালের ২ অক্টোবর রাতে শেরপুর উপজেলা সদরের স্যানালপাড়ায় বাসার অদূরে দীপংকর চক্রবর্তীকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। তিনি বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দুর্জয় বাংলা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সদস্য ও ভবানীপুর মন্দির কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

পুলিশ ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর বগুড়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম এ টি এম তোফায়েল আহমেদের নির্দেশে মামলাটি পুনঃ তদন্ত করছে ডিবি।

মামলার বাদী ও দীপংকর চক্রবর্তীর ছেলে পার্থ সারথি চক্রবর্তী বলেন, এই সময়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগই করেননি। তদন্তের অগ্রগতি প্রতি মাসে আদালতকে লিখিতভাবে জানানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ঘটনার সময় পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের নতুন জেলা কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগে এ নিয়ে সমঝোতা বৈঠক বসলে সেখানে বাবার ওপর চড়াও হয়েছিলেন পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের কয়েকজন নেতা। তা ছাড়া, ভবানীপুর মন্দিরের জায়গা উদ্ধার নিয়েও একটি মহলের রোষানলে পড়েছিলেন বাবা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই মজিবর রহমান বলেন, তদন্তে উল্লেখ করার মতো অগ্রগতি নেই। এখন তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। তাঁরা যেভাবে বলবেন সেভাবেই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

দীপংকর চক্রবর্তীর ছোট ছেলে অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী বলেন, হত্যাকাণ্ডের সন্দেহের শীর্ষে থাকা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের প্রভাবশালী একজন নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।

পুলিশ ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যার পরদিনই পার্থ সারথি শেরপুর থানায় মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে থানার এসআই সাজাহান পাশা, তারপর তৎকালীন ওসি নুরুল ইসলাম তদন্ত করেন। এরপর তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। ২০০৭ সালের ২৬ নভেম্বর সিআইডি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এর বিরুদ্ধে পার্থ সারথি চক্রবর্তী নারাজি আবেদন করলে আদালত মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য শেরপুর থানা-পুলিশকে নির্দেশ দেন। শেরপুর থানার তৎকালীন এসআই আমিরুল ইসলাম ২০১২ সালের ১১ জুলাই আবার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। বাদী আবারও নারাজি দিলে আদালত সিআইডিকে পুনঃ তদন্তের নির্দেশ দেন। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আবদুস সামাদ ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। আবারও বাদী নারাজি আবেদন করলে আদালত ডিবিকে পুনঃ তদন্তের নির্দেশ দেন।

বিএফইউজের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য শংকর বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার দেখা করে দীপংকর চক্রবর্তী হত্যার বিচার চাওয়া হয়েছে। প্রতিবারই আশ্বাস মিলেছে। কিন্তু বিচার দূরে থাক, আজ পর্যন্ত মামলার সঠিক তদন্তই হয়নি।