দুদক কারও কাজে হস্তক্ষেপ করে না

কারও কথার ভিত্তিতে কথা বলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজ নয়। দুদক কারও কাজে হস্তক্ষেপও করে না। সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করাই দুদকের কাজ।

রাজউকে দুদকের হস্তক্ষেপ সম্পর্কে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকেদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এ কথা বলেন।

আজ বুধবার সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে দুদকের সাম্প্রতিক গ্রেপ্তার অভিযানের সমালোচনা করে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘দুদক রাজউকে অভিযান চালাক কোনো অসুবিধা নেই, তবে ডিস্টার্ব করলে অসুবিধা আছে। আমি মনে করি, নো বডি ইজ ট্রান্সপারেন্ট।’ তাঁর এ বক্তব্য প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যানের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘দুদক আইনের প্রস্তাবনায় দুর্নীতি দমনের চেয়ে প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিরোধ কার্যক্রমের আওতায় দেশব্যাপী আমরা দুর্নীতিবিরোধী একটি আওয়াজ তুলতে চাই। এ কাজে সহযোগিতার জন্য গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক করছি। অন্যদের সঙ্গেও সমঝোতা করব।’

ইন্দোনেশিয়ার দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ‘কেপিকে’ সে দেশের ক্ষমতাসীন দলের অনেক মন্ত্রী-সাংসদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করছে। সম্প্রতি দুদক কেপিকের কার্যক্রম দেখতে ইন্দোনেশিয়া সফর করেছে। দুদকও এ ধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে কি না, জানতে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘কেপিকের কাছ থেকে আমাদের বেশ কিছু বিষয় শিক্ষণীয় ছিল। তাদের শতভাগ অর্জন রয়েছে। এ কারণে সংস্থাটির সঙ্গে আমরা একটি সমঝোতা চুক্তি করার চেষ্টা করছি। কেপিকে ইদানীং গ্রেপ্তার কমিয়ে দিয়েছে। আমরাও গ্রেপ্তার করতে চাই না। এটি খারাপ জিনিস। আমরা চাই, সবাই আইন মেনে চলুক। আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করুক। অপরাধ করেছেন, আদালতে যান।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও সাংসদদের গ্রেপ্তারে আইনগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বেসিক ব্যাংক মামলায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে গ্রেপ্তার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘৫৬টি মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তাধীন বিষয়ে আগাম মন্তব্য করা সমীচীন নয়। ওয়েট অ্যান্ড সি। সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি না করলে তখন অবশ্যই আমাদের অভিযুক্ত করবেন।’

সমঝোতার স্মারক স্বাক্ষরের পর দুদক চেয়ারম্যান চলতি বছরের মার্চ থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত সংস্থার কার্যক্রমের বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি জানান, মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় ৩১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দুর্নীতি মামলায় সাজার হার ৩৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৯ দশমিক ৬৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে এতে দুদক সন্তুষ্ট নয়। ২০৬টি মামলা কমিশন অনুমোদন দিয়েছে। এর আগেরসহ ৩১৬টি মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে। ৩০১টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এগুলোর অধিকাংশই আগের মামলা।

মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৪১টি প্রতিবেদন অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। তফসিলভুক্ত না হওয়ায় ৩৯০টি অভিযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সিপিডি বলছে, দুর্নীতির প্রকোপ কিছুটা কমেছে। কীভাবে তারা এটি বলল জানি না। তবে পাবলিক পারসেপশন কী বলতে পারব না। আমাদের কাছে মনে হয়, দুর্নীতির প্রকোপ আশানুরূপ কমেনি। আশা করছি, চলতি বছর ডিসেম্বরের পর আপনাদের ভালো একটি পরিসংখ্যান দিতে পারবে। এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।’