কেঁচো বদলে দিল ভাগ্য

কেঁচো সার তৈরির কাজে ব্যস্ত এমদাদুল হক। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
কেঁচো সার তৈরির কাজে ব্যস্ত এমদাদুল হক। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

ঢাকার দোহার উপজেলার এমদাদুল হক। সিঙ্গাপুরে ছিলেন ১২ বছর। দেশে ফিরে জমানো টাকা দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। এতে সফল হতে পারেননি। তত দিনে জমানো টাকাও শেষ। চলতে হতো ধারদেনা করে। হঠাৎ একদিন জানতে পারলেন কেঁচো জৈব সার (ভারমিকম্পোস্ট) সম্পর্কে। সেই কেঁচো সার বদলে দিয়েছে তাঁর জীবন।
এমদাদুল হকের বাড়ি উপজেলার বানাঘাটা গ্রামের নিকড়া বটতলা এলাকায়। জীবিকার তাগিদে নব্বইয়ের দশকে বিদেশে গিয়েছিলেন। দেশে ফিরে জমানো টাকা দিয়ে শুরু করেন বিদেশি যন্ত্রাংশ আমদানির ব্যবসা। কিন্তু তাতে তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়নি। এমদাদুল বলেন, ব্যবসায় লোকসান হলেও তিনি নতুন উদ্যমে অর্থ লগ্নি করতেন। এভাবে নয় বছরে তাঁর অনেক টাকা লোকসান হয়। এরপর শুরু হলো কষ্টের জীবন। এভাবে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন তিনি জানতে পারেন কেঁচো জৈব সার সম্পর্কে। বিষয়টি কী তা জানতে তিনি ঢাকায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে যান। সেখানে পরিচয় হয় একজন কৃষিবিদের সঙ্গে। এরপরের গল্প ঘুরে দাঁড়ানোর।
২০১৪ সালের শুরুতে একটি মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ১০ কেজি ধারণক্ষমতার দুটি চাড়ি (মাটির তৈরি পাত্র) দিয়ে এমদাদুল শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদন। দুটি চাড়িতে ১৪ কেজি গোবর, চার কেজি খড়কুটো ও ২০০ গ্রাম কেঁচো দিয়ে শুরু করেন সার উৎপাদন। দুটি চাড়ি থেকে মোট সার পেয়েছিলেন ১২ কেজি। প্রথম দিকে উৎপাদিত সার কলাবাগানে দিয়ে নিজের রাসায়নিক সারের চাহিদা পূরণ করতেন এমদাদুল। এরপর আস্তে আস্তে কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হতে থাকে এ সার। তিনিও বাড়াতে থাকেন সার উৎপাদন।
বর্তমানে এমদাদুল প্রতিটি ৭০০ কেজি ধারণক্ষমতার তিনটি হাউসে (সিমেন্ট দিয়ে তৈরি বড় আধার) সার উৎপাদন করছেন। ১৫০০ কেজি গোবর, ৪০০ কেজি কলাগাছের টুকরা ও ২০০ কেজি খড়কুটো দিয়ে জৈব সার উৎপাদনের জন্য রাখা হয়। আর কেঁচো দেওয়া হয়েছে ৬ কেজি। বর্তমানে ১২ কেজির বেশি কেঁচো আছে হাউসে। কেঁচো সার প্রস্তুত হতে সময় লাগে দেড় মাস।
নিকড়া বটতলা মোড়ে একটি ছোট দোকান আছে এমদাদুলের। সেখানে তিনি কীটনাশক ও কেঁচো জৈব সার বিক্রি করেন। গ্রামের যে কৃষকেরা এ সার ব্যবহার করে সুফল পেয়েছেন, তাঁরা সবাই তাঁর দোকান থেকে সার নিয়ে যান। অনেকে তাঁর বাড়ি থেকেও নিয়ে যান। গ্রামের সব কৃষক কমবেশি এ সারের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। এমদাদুল হক বলেন, ‘এ সার উৎপাদনে খরচ খুব বেশি না। আর এটা অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। এ সার আমাকে আশার আলো দেখিয়েছে।’
এমদাদুলের নিজের দেড় বিঘা জমি আছে। সেখানে তিনি নরসিংদীর অমৃতসাগর কলার চাষ করেছেন। এ জৈব সার ব্যবহার করায় কলার মান ভালো হয়। ফলনও হয় অনেক বেশি। এমদাদুলের ছোট একটি পেঁপের বাগানও আছে। সেখানেও তিনি ব্যবহার করেন জৈব সার।
নিকড়া গ্রামের কৃষক মুজাহার হোসেন বলেন, ‘আমার দেড় বিঘা জমিতে ধান চাষের সময় কেঁচো সার ব্যবহার করছি। এই সার ব্যবহার কইরা সুফল পাইছি। এখন থেকে এই সারই জমিতে দিমু।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এমদাদুল উপজেলায় কেঁচো সার উৎপাদনে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। এখন কৃষকের মধ্যে এ সার জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কেউ কৃষি অফিসের সাহায্য চাইলে আমরা সাহায্য করি। যাদের কেঁচোর প্রয়োজন হয়, তাদের কেঁচোও সরবরাহ করা হয়।’