নতুন ভবনটি ছয় বছর ধরে পরিত্যক্ত

অসমাপ্ত ৫০০ শয্যার নতুন ভবন l ছবি: প্রথম আলো
অসমাপ্ত ৫০০ শয্যার নতুন ভবন l ছবি: প্রথম আলো

ছয় বছর ধরে অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫০০ শয্যার বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের করা একটি রিট মামলায় ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ওই মামলার নিষ্পত্তি হলেও নির্মাণকাজ আর শুরু হয়নি। কবে শুরু হবে তা-ও বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
এ অবস্থায় পুরোনো ভবনে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, এ ব্যাপারে বারবার গণপূর্ত বিভাগে চিঠি দেওয়া হলেও কাজ শুরু হচ্ছে না। গণপূর্ত বিভাগ বলছে, নতুন দরপত্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পেলে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না।
২০০৮ সালের মার্চে বর্তমান হাসপাতাল ভবনের পূর্ব পাশে ৫০০ শয্যার ওই ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২০১০ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করে ভবনটি হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু ভবনের পাঁচতলা পর্যন্ত মূল অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি।
বরিশাল গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের অক্টোবরে হাসপাতালের বর্ধিত ১০ তলা ভিতসহ একটি সাততলা ভবন নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০০৮ সালের ৪ মার্চ ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ পায় জেবি আজাদ কনস্ট্রাকশন ও ঢাকা মার্কেন্টাইল করপোরেশন লিমিটেড। কার্যাদেশে ২০১০ সালের ৪ জুনের মধ্যে ভবন হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। কাজে ধীরগতির কারণে সাততলার পরিবর্তে নির্মাণকাজ পাঁচতলায় নামিয়ে আনা হয়। নির্মাণব্যয় কমিয়ে ধরা হয় ২০ কোটি টাকা। তখন নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির অজুহাত তুলে কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন দরপত্র আহ্বান করতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করে এবং নির্মাণকাজও সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। কাজ বন্ধ রাখার কারণে ২০১০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সূত্রটি জানায়, ২০১৫ সালের ২২ মার্চ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের করা রিট মামলাটি নিষ্পত্তি হয়। এরপর ওই বছরের ৭ জুন ১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় ধার্য করে দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নেয় গণপূর্ত বিভাগ। ওই তারিখেই দরপত্রটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে চলতি বছরের জুনে অনুমোদন না দিয়ে সেটি ফেরত পাঠায়। তবে আবারও এটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগ বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী ওসমান গণি প্রথম আলোকে বলেন, এক বছর আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মামলাটি নিষ্পত্তি হয়। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ভবনটির কাজ শুরু করতে দরপত্র তৈরি করে অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় সেটি ফেরত পাঠিয়েছে। তবে আবারও অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পেলে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পুরোনো ৫০০ শয্যার স্থাপনায় প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। শয্যা সংকটের কারণে মেঝে ও করিডরে রোগীরা স্থান নেন। কিন্তু সেখানেও জায়গা হয় না। ফলে বহু কষ্টে অনেককে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক এস এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ধারণক্ষমতার চার গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। এ অবস্থায় সুষ্ঠুভাবে সেবা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জায়গার অভাবে চিকিৎসক ও নার্সদের বসার স্থান দেওয়া যাচ্ছে না। দ্রুত বর্ধিত ভবন ব্যবহার উপযোগী করে হস্তান্তর করলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ যেমন কমবে, তেমনি চিকিৎসাসেবাতেও স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসবে।