রামপাল প্রকল্প নিয়ে চিঠির জবাবে সরকার

রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থার (ইউনেসকো) চিঠির জবাবে এই মতামত জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ইউনেসকোর উদ্বেগ যথেষ্ট তথ্যভিত্তিক নয় বলেও ৬৩ পৃষ্ঠার জবাবে উল্লেখ করা হয়।

গত রোববার রাতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. নুরুল করিম ইউনেসকোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলামের কাছে জবাবটি পাঠিয়েছেন। তিনি ইউনেসকোর কাছে জবাবটি তুলে দেবেন। গত মার্চে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে রামপাল প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে কি না, তা যাচাই করতে একটি রিঅ্যাকটিভ মনিটরিং দল বাংলাদেশে এক সপ্তাহের জন্য পরিদর্শনে আসে। তারা ফিরে গিয়ে গত জুনে রামপাল ও সুন্দরবন বিষয়ে ৩০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। গত আগস্টে বাংলাদেশকে পাঠানো এই প্রতিবেদনে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়।

পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে জবাব তৈরি করা হয়েছে। আশা করি তারা আমাদের জবাবে সন্তুষ্ট হবে।’

জবাবে বলা হয়, ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের উদ্বেগকে বাংলাদেশ স্বাগত জানায়। পরিবেশ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, সুন্দরবনের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য সরকার সব ধরনের উদ্যোগ নেবে।

জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত নুরুল করিম ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউনেসকোর প্রতিটি প্রশ্নের জবাব পাঠিয়েছি। এরপরও তাদের যদি কোনো জিজ্ঞাসা থাকে, তার জবাব দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’

বাংলাদেশের জবাবে বলা হয়, বিশ্বব্যাংক ও আইএফসির নীতিমালা অনুসরণ করে রামপাল প্রকল্পে পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এর ফলে সুন্দরবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

ইউনেসকো রামপাল প্রকল্পের জন্য সুন্দরবনের আশপাশের এলাকার পরিবেশ ও নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জন্য একটি কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) করতে বলেছে। সরকার জবাবে বলেছে, রামপাল প্রকল্পের একটি পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) করা হয়েছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা পরিবহন নিয়ে ইউনেসকো আশঙ্কা করেছিল, বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে জাহাজ চলাচল বেড়ে সুন্দরবনে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। জবাবে সরকার বলেছে, কয়লা পরিবহনের জন্য বর্তমানের তুলনায় মাত্র ২ শতাংশ জাহাজ বেশি চলাচল করবে। এ ছাড়া খুব উন্নতমানের পরিশোধনাগার থাকবে। পানি থেকে তেল ছাড়াও সব ধরনের বর্জ্য পরিশোধন করা হবে। এখান থেকে কোনো বর্জ্যই পরিশোধন না করে পরিবেশের সঙ্গে মেশানো হবে না। পরিশোধিত পানির বড় অংশ ব্যবহার করা হবে।

বাংলাদেশ আরও জানিয়েছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ ছাই (কয়লা পোড়ানোর পর অব্যবহৃত অংশ) রাখা হবে, যা বাতাসে ছড়াতে পারবে না। এগুলো বাতাসে ছড়িয়ে যে পরিবেশদূষণের আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। এ ছাড়া প্রকল্প থেকে আসা কয়লার ছাই স্থানীয় সিমেন্ট ও সিরামিক কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। স্থানীয়ভাবে বাজার জরিপ করে দেখা গেছে, ছাইয়ের বড় বাজারও রয়েছে। ছাই সংরক্ষণের জন্য ২৫ একর জমির ওপর একটি সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হবে। অর্থাৎ ছাইকে বাতাস বা পানির সঙ্গে মিশতে দেওয়া হবে না।

সরকার বলেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ২৭৫ মিটার উচ্চতার চিমনি ব্যবহার করা হবে, যা ৯০তলা ভবনের চেয়ে বেশি উচ্চতার। বাতাসের স্তর বিবেচনা করে এই চিমনি দিয়ে বাতাসের ওই স্তরে দশমিক ১ ভাগের কম ছাই ছাড়া হবে, যা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ছাই সুন্দরবন অতিক্রম করে সাগরে গিয়ে পড়বে।

ইউনেসকোর চিঠির জবাবে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চক্রাকার পদ্ধতিতে নদীর পানি ব্যবহার করবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি শীতলীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। কেন্দ্রটি কোনো গরম পানি ঠান্ডা না করে নদীতে ছাড়বে না। এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।