জন্ম-মৃত্যুসনদ জালিয়াতি, জড়িত দালালকে ৪৫ দিনের কারাদণ্ড

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

জন্ম-মৃত্যুসনদ জালিয়াতিতে জড়িত এক দালালকে ৪৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীন। মঙ্গলবার দুর্জয় ফিরোজ নামের ওই ব্যক্তিকে ৪৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়, গত ডিসেম্বর মাসে আনোয়ারা বেগম নামের এক ভদ্রমহিলার স্বামী মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ায় মৃত্যুসনদের প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে বসবাসরত ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ঠিকানায় জন্মসনদের আবেদন করেন। সে জন্য তিনি একজন দালালকে ছয় হাজার টাকা দেন এবং দালাল দক্ষিণ সিটি থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ না করে অন্য আরেক সিটি করপোরেশনের ভুয়া বর্তমান ঠিকানা দেখিয়ে সে সিটি করপোরেশনের একটি আঞ্চলিক অফিস থেকে ভদ্রমহিলার স্বামীর জন্মনিবন্ধন সনদ সরবরাহ করেন।

জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ–পরবর্তী ভদ্রমহিলা নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুনিবন্ধন সনদের আবেদন করেন এবং সে কাজও করে দেওয়ার লক্ষ্যে দালাল দুর্জয়ের আরেক সহযোগী মলি নামের আরেক দালালকে ৯ হাজার টাকা দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন হলেও মৃত্যুনিবন্ধন সনদ সরবরাহ করতে না পারায় ভদ্রমহিলা আজ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীনের দপ্তরে আসেন।

এ সময় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ভদ্রমহিলার আবেদন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখেন যে আবেদনে প্রদত্ত ঠিকানা দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-১–এর আওতাধীন এলাকা হলেও তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে সংগ্রহ না করে অন্য আরেকটি সিটি করপোরেশনের একটি আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করেছেন। ফলে আবেদনকারী দালালকে ১৫ হাজার টাকা দিলেও দীর্ঘদিন ধরে মৃত্যুনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে পারেননি।  

এ অবস্থায় দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-১–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদনকারীর কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা শোনেন এবং দালাল ফিরোজকে ফোন দিতে বলেন। দালাল ফিরোজ আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীনের দপ্তরে এলে জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সনদ সরবরাহে জড়িত থাকার অপরাধে তাঁকে ৪৫ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৮–এর ২১ (৩) ধারায় ফিরোজকে এই দণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়।

সামগ্রিক ঘটনাবলি সম্পর্কে অঞ্চল-১–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীন বলেন, ‘বর্তমান ঠিকানা আমার আওতাধীন এলাকায় হওয়া সত্ত্বেও ভুক্তভোগী নারীকে ভুল বুঝিয়ে এই দালাল বর্তমান ঠিকানাকে স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়ে অন্য আরেকটি সিটি করপোরেশনে ভুয়া বর্তমান ঠিকানা দেখিয়ে সেই অঞ্চলের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জন্মনিবন্ধন সংগ্রহ করে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বর্তমান/স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণ যাচাই না করে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়েছে। সনদ জালিয়াতিতে জড়িত থাকায় দুর্জয় ফিরোজ নামের দালালকে ৪৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’

জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে দালালের খপ্পরে না পড়তে আহ্বান জানিয়ে মেরীনা নাজনীন আরও বলেন, ‘দক্ষিণ সিটির আওতাধীন বাসিন্দাদের দালালের খপ্পরে না পড়ে নিজ নিজ স্থায়ী ঠিকানার উপযুক্ত প্রমাণসহ সর্বোচ্চ ৫০/১০০ টাকা ফি দিয়ে জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ ও সংশোধন করার জন্য অনুরোধ করছি।’