জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তাঁর চিন্তা ও কাজ দিয়ে একটি স্বস্তির বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১–এর মুক্তিযুদ্ধ হয়ে আজকের বাংলাদেশ—জাতি গঠনের প্রতিটি পর্বে তিনি ছিলেন সক্রিয়ভাবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মাণের পথে যতগুলো চিন্তার ধারা আছে, তার সব কটিকে তিনি গুরুত্ব দিতেন।
শুক্রবার প্রথমা প্রকাশন আয়োজিত ‘আনিসুজ্জামানের জন্মদিনে ফিরে দেখা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর বেঙ্গল শিল্পালয়ে ওই অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামানের তিনটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। তাঁর বই ও কর্মজীবন নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্টজনেরা। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশ করা বইগুলো হলো আমার অভিধান, মহামানবের সাগরতীরে: ইতিহাস-সমাজ-সংস্কৃতি-স্মৃতি এবং স্মৃতির মানুষ।
১৮ ফেব্রুয়ারি ছিল আনিসুজ্জামানের জন্মদিন।
অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামানের স্ত্রী সিদ্দিকা জামান বলেন, ‘তিনি আমাদের পরিবারের পরিধি ছাপিয়ে পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। এই দেশটাকে তিনি তাঁর পরিবারের অংশ মনে করতেন। যে কারণে তিনি এই জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পেরেছিলেন।’ প্রথমা থেকে বের হওয়া বইগুলো খুব যত্নের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আনিসুজ্জামান বেঁচে থাকলে বই তিনটি হাতে পেয়ে খুব খুশি হতেন।
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান নামের একটি মানুষের ভেতরে অনেকগুলো মানুষ ছিল। তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের প্রতিটি আন্দোলনের প্রথম সারির মানুষ ছিলেন। তিনি এ দেশের মানুষের মানস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন। আজীবন তাঁর চিন্তা ও কাজ দিয়ে একটি স্বস্তির বাংলাদেশ নির্মাণের চেষ্টা করে গেছেন।
‘বাংলা ভাষাকে বিশ্বমানচিত্রে তুলে ধরতে হলে আনিসুজ্জামানকে আমাদের পাঠ করতে হবে, তাঁর চিন্তার পথ ধরে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘ইংরেজ শাসন আমলে বাঙালি মুসলমানের মনের পরিবর্তনগুলো আনিসুজ্জামান বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১–এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ গড়ে উঠছিল, তার প্রতিটি পর্বের বিশ্লেষণ আনিসুজ্জামানের লেখায় আমরা পাই। তাঁর চিন্তা ও চর্চার সঙ্গে মিল নেই, এমন অনেক মানুষের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক রাখতেন। কারণ, বাংলাদেশের মানুষের মানস গঠনে যেসব চিন্তা প্রভাব ফেলছে, তার সবই তিনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন।’
প্রথমা প্রকাশনের নামটিও আনিসুজ্জামানের দেওয়া, এ কথা উল্লেখ করে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হওয়া বিভিন্ন শব্দের অর্থ, ব্যবহার ও বিশ্লেষণ তিনি ধারাবাহিকভাবে প্রথম আলোর সাহিত্য পাতায় লিখতেন। ওনার পরিকল্পনা ছিল, ১০০টি শব্দ নিয়ে লেখা শেষ হলে তিনি বই আকারে তা প্রকাশ করবেন। কিন্তু ৬২টি শব্দ নিয়ে লেখার পর তিনি আর লিখে যেতে পারেননি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দুটি রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে শোনান সংগীতশিল্পী সায়ন্তনী ত্বিষা। সিদ্দিকা জামান, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও সাজ্জাদ শরিফ বই তিনটির মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথমা প্রকাশনের সমন্বয়কারী অরুণ বসু। অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, সাহিত্যিক ও আনিসুজ্জামানের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।