আসকের অনুষ্ঠানে উত্তেজিত শিক্ষা উপমন্ত্রী
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) অনুষ্ঠানে মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। মানবাধিকারকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ও পুলিশি অ্যাকশন নিয়ে যত কথা বলেন, তত বলেন না ওদের (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সংস্থা) নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে।’ এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার জন্য তাঁর সময় বেঁধে দেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান এবং ভবিষ্যতে কখনো আসকের অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ না জানাতে বলেন।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় আসক আয়োজিত ‘অনলাইনে শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ ও শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিতকরণ: পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও করণীয় নির্ধারণ’ শিরোনামের ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। শিক্ষা উপমন্ত্রী অন্য একটি বৈঠক থাকার কথা জানিয়ে আগে বক্তব্য দিতে চান। ওই সময় গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালক আসকের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল তাঁকে বক্তব্য দিতে বলেন এবং এর জন্য সময় ৬ মিনিট বেঁধে দেন।
বক্তব্য শুরু করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘ইন্টারনেট যেমন সুযোগ তৈরি করছে, তেমনি সমাজের সব পর্যায়ে ঝুঁকিও তৈরি করছে। এ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে, যারা ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা সব দেশের আইনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকছে। সীমিত ধর্মীয় জ্ঞান নিয়ে কেউ কেউ ওয়াজের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীর সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ন্ত্রণে ফতোয়া দেন। এটা নারী ও শিশুর জন্য ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে। ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে গেলে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, তাদের কমিউনিটি আইন অনুযায়ী ওই ব্যক্তিরা আইন ভঙ্গ করছেন না। এই বলে তারা কোনো নিয়ন্ত্রণ মানতে চায় না। ওই ব্যক্তিদের বক্তব্যকে তারা বাক্স্বাধীনতা বলে উল্লেখ করে। অথচ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সেসব বক্তব্য সমস্যা সৃষ্টি করছে।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ওই ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্ল্যাটফর্মের সহায়তা পাওয়া যায় না। ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল ব্যবস্থা নিতে গেলে প্ল্যাটফর্মগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, বাক্স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে উল্লেখ করে আইনি ব্যবস্থা নিতে তারা বাধার সৃষ্টি করে। বিদেশি অনুদানের স্বার্থে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে বেসরকারি সংস্থাগুলো কিছু বলতে চায় না। সুনির্দিষ্ট উদাহরণ রয়েছে, অনেক কনটেন্ট নারীর বিরুদ্ধে যায়, বাক্স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যায়, অথচ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘আপনারা (মানবাধিকার সংস্থা) তো সরকারের অনেক আলোচনা–সমালোচনা করেন, এটা নিয়ে কেন কথা বলেন না? সম্প্রতি এক ব্যক্তি ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করলেন। সেই ভিডিও হাইকোর্টের সুয়োমোটো রুলের পর সরানো হয়েছে। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তো উচ্চ আদালতের আদেশ আনা সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলো পশ্চিমা দেশের ব্যাপারে সতর্ক থাকলেও আমাদের দেশের ব্যাপারে সতর্ক নয়।
হিন্দুধর্মাবলম্বী ও মন্দিরে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে দাঙ্গা ছড়াল। অস্থিতিশীলতা তৈরি হলো। কেউ তো ফেসবুক বন্ধের কথা বলছেন না। মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে রাজনৈতিক ভূমিকা অগ্রাহ্য করে নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে কথা বলা উচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অব্যাহতভাবে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করা হচ্ছে। তিনি আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে সরকারেকে সহায়তা করার জন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি অভিযোগ করেন, মানবাধিকার সংস্থাগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পুলিশের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যত সোচ্চার, তত সোচ্চার নয় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে।
উপমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর আসকের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল উপমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি না জেনেই কিছু কথা বলেছেন। আমরা এসব বিষয়ে (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়ানো) সুপারিশ করে থাকি।’ ওই সময় উপমন্ত্রী মাইক নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা অনুষ্ঠানে কিছু শিষ্টাচার রাখবেন। বিশেষ অতিথিকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। এটা অশোভন, দৃষ্টিকটু।’ ওই সময় মনোয়ার কামাল তাঁকে বলেন, ‘আপনাকে তো ১৫ মিনিট সময় দেওয়া হলো।’ ওই সময় ক্ষুব্ধ স্বরে উপমন্ত্রী বলেন, ‘এমন ব্যবহার করবেন না, যা শোভন নয়। অভিযুক্ত তারেক রহমানের (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) লোক আপনাদের বোর্ড অব গভর্ন্যান্সে আছে। আপনারা আর কখনো আমাকে ইনভাইট (আমন্ত্রণ) করবেন না। আমি আপনাদের অনুষ্ঠানে কখনো আসব না।’
এ বিষয়ে পরে শিক্ষা উপমন্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ আছে তাই আমি বিষয়টি উল্লেখ করেছি। আইনজীবী আসাদুজ্জামান আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি তারেক রহমানের সাবেক আইনজীবী।’