ঈদের দিনেও বসে নেই তাঁরা
ঈদে সবার ছুটি হলেও কিছু পেশা রয়েছে, যেখানে কর্মীদের থাকাটা অত্যাবশ্যকীয়। জরুরি সেবা হিসেবে বিবেচিত এসব পেশার মানুষ ঈদের দিনেও সেবা দিয়ে যান। ঈদে কর্মস্থলে ব্যস্ত সময় কাটানো সেই সব মানুষের কয়েকজনের কথা তুলে ধরা হলো।
চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাই বড় দায়িত্ব
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্বাভাবিক সময়ে দিনে তিন শিফটে ১২ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন। ঈদের ছুটির সময়ে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৬। আজ মঙ্গলবার ঈদের দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে গেলে সাক্ষাৎ হয় অনারারি চিকিৎসক মেঘলা পালের সঙ্গে। তিনি ২০১৯ সালে সাভারের ইনাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। এই ইউনিটে ৩৮টি শয্যা রয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যস্ততম ইউনিটগুলোর একটি এটি। একের পর এক রোগী নিয়ে আসছেন অভিভাবকেরা। আবার কিছুক্ষণ পরপর ইউনিটে ভর্তি রোগীদের পর্যবেক্ষণে যেতে হয়। দম ফেলার জো নেই। এর মধ্যেই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন মেঘলা পাল। বাবা চিকিৎসক শ্যামলাল পালকে দেখেই চিকিৎসক হওয়ার অনুপ্রেরণা তাঁর।
মেঘলা পাল বলেন, ‘ঈদে সহকর্মীরা ছুটিতে যাওয়ায় কাজের চাপ একটু বেশি থাকে। তবে চিকিৎসকের ওপর রোগীর আত্মীয়স্বজনদের ভরসা করতে দেখে এবং তাঁদের সেবা নিশ্চিত করতে পারলে একধরনের ভালো লাগা কাজ করে। এটা বলে বোঝানো যাবে না, চিকিৎসক মাত্রই তা অনুভব করতে পারবেন।’
চিকিৎসাকে পেশা নয়, বরং সেবা হিসেবে বিবেচনা করেন মেঘলা পাল। চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি এখন তিনি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভবিষ্যতে শিশুস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে চান এই তরুণ চিকিৎসক।
প্রতি ঈদে মায়ের রান্নাটা ‘খুব মিস করেন’ রিশাদ হাসান
পরিবারের সদস্যদের ছাড়া ঢাকার কর্মস্থলে ১১তম ঈদুল ফিতর কাটিয়েছেন দেশ টিভির নিজস্ব প্রতিবেদক রিশাদ হাসান। এর আগে বেসরকারি রেডিও ও বিভিন্ন টেলিভিশনে কাজ করেছেন তিনি।
ঈদের সময় দায়িত্ব পালন বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে রিশাদ বলেন, গণমাধ্যম এমন একটা জায়গা, যেখান থেকে তথ্য পাওয়ার জন্য গণমানুষের অপেক্ষা থাকে। সেই তথ্যের দায়বদ্ধতা থেকেই বিশেষ করে ঈদ বা জাতীয় ছুটিতেও গণমাধ্যমকর্মীরা কাজ করে থাকেন। তিনি বলেন, ‘কাজের নেশা তো আছে, আমি বোধ করি এই দায়বদ্ধতা আমাকে এই সময়ে পরিবার থেকে দূরে থেকে কাজ করতে সহায়তা করে।’
রিশাদ বলেন, পরিবার থেকে দূরে থাকা একটি কঠিন বিষয়। বিশেষ করে করোনা সংক্রমণ–পরবর্তী সময়ে যখন সবাই ঘরমুখী, তখন এই আনন্দের ভাগ নিতে না পারাটা খুব কষ্টের। ছোট ভাই ক্লাস নাইনে পড়ে, ওর প্রচণ্ড মন খারাপ থাকে। তিনিও প্রতি ঈদে মায়ের হাতের রান্নাটা খুব মিস করেন।
সকালে ডিউটি করে বিকেলে পরিবারকে সময় দেবেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য মাসুদ
বেলা দেড়টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে কথা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মাসুদ রানার সঙ্গে। প্রায় ১৯ বছর চাকরি করছেন ট্রাফিক বিভাগে। মা আর ভাইবোনেরা টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে থাকেন। স্ত্রী আর দুই সন্তান ঢাকায় থাকেন। সন্তানেরা ছোট হওয়ায় ঈদের সময়ে তারা চায়, বাবা তাদের সঙ্গে থাকুক। কিন্তু বাবাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাসুদ রানা বলেন, বাচ্চারা একটু মন খারাপ করে। কিন্তু দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে ঈদের দিনে যানবাহনের চাপ কম থাকে।
গত বছরও ঈদের সময় বাড়ি যাওয়া হয়নি জানিয়ে মাসুদ বলেন, ‘ঈদের দিন দায়িত্ব পালনের সময় দু-একজন এসে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অন্য সবাই যখন আনন্দ উদ্যাপন করছেন, তখন আমরা দায়িত্ব পালন করছি। এ কারণে ধন্যবাদ দেন। এই ধন্যবাদ পেয়ে মনে হয় আমরা জাতীয় দায়িত্ব পালন করছি।’
খারাপ লাগে কিন্তু পেটের জন্য কাজ করতে হয়: পরিবহনশ্রমিক হৃদয়
বেলা দুইটার দিকে গুলিস্তান থেকে এয়ারপোর্টগামী বাসের চালকের সহকারী মোহাম্মদ হৃদয়ের সঙ্গে কথা হয়। ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ২০১৭ সালে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্য তাঁর সহায় হয়নি। দেড় বছর সে দেশের কারাগারে জেল খেটে ফিরে আসেন হৃদয়। এসে বাসের চালকের সহকারীর কাজ শুরু করেন। নববিবাহিত স্ত্রীকে ঘরে রেখেই ঈদের দিন ভোরে বাসের সঙ্গে বের হয়েছেন তিনি।
প্রথম আলোকে হৃদয় বলেন, ‘ঈদের দিনে কাজ করতে কার ইচ্ছে হয় বলেন? পেটের দায়ে কাজ করতে হয়।’