এই ঈদে পারলারে গ্রাহক কম, বদলেছে পছন্দের ধরন

করোনার জন্য পারসোনায় সেবাগ্রহণকারীদের কাউন্টারে দাঁড়াতে হচ্ছে নির্দিষ্ট দূরত্বে। দুপুরের দিকে বেড়েছে ভিড়
ছবি- প্রথম আলো

বছর ঘুরে রোজার ঈদ এলে পারলারগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। চাঁদরাতে পারলারে স্থানসংকট হয়ে যায়। দুই মাস পরই আরেকটি ঈদে ঠিক অতখানি উৎসাহ থাকে না। এর সঙ্গে আছে আবার নতুন করে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর। ফলে রাজধানীর পারলারগুলোতে সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়েনি এবারের ঈদে।

আজ শনিবার বিভিন্ন পারলার ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের মতো সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা। তবে প্রতিষ্ঠিত বড় পারলারগুলোতে ভিড় একটু বেশি। করোনার সংক্রমণ রোধে সব সতর্কতা মেনেও চলছেন তাঁরা। মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাপমাত্রা মেপে হাত স্যানিটাইজ করতে হচ্ছে।

সেবা গ্রহণের পর কাস্টমারের জন্য ব্যবহার করা সব জিনিস পরিচ্ছন্ন করে ব্যবহার করা হচ্ছে পরের জনের জন্য। এ জন্য সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা কম হলেও কাজের চাপ আছে কর্মীদের।

ধানমন্ডির ফারজানা শাকিলস মেকওভারে আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে সেবা নিতে এসেছেন ৩৫ জন। এখানকার সহকারী ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ফাতেমা ইসলাম জানালেন, রোজার ঈদে এ সময়ের মধ্যে শতাধিক কাস্টমার হয়ে যায়। তবে দুপুরের পর থেকে সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে।

ফাতেমা ইসলাম প্রথম আলোকে বললেন, মানুষের পছন্দের ধরন কিছুটা বদলেছে। চুলের রং করা আর বডি ম্যাসাজের প্রতি এখন ঝোঁকটা বেশি। নীল, সবুজ আর লাল রঙের স্টিক চুলে লাগাতে আসছেন নারীরা। আর ঘণ্টাখানেকের বডি ম্যাসাজের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে পেইন রিলিফ ম্যাসাজ। শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ম্যাসাজ করলে আরাম হয়। ফলে নারীরা এখন এ সেবা নিচ্ছেন। সেবাটির মূল্য শুরু হয়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে। এ ছাড়া স্বাভাবিক সময়ের অন্যান্য সেবা—আইভ্রু থ্রেডিং বা হাত–পায়ের যত্নের মতো সেবাগুলো নিতে আসেন সব সময়ের গ্রাহকেরা। ফেসিয়াল করানোর সেবাগ্রহীতাদের উপস্থিতি অন্যান্য সময়ের মতোই।

কাঁঠালবাগানের স্টাইল বিউটি পারলারে দুপুরে কোনো ক্রেতাই আসেননি
ছবি- প্রথম আলো

দুপুরের দিকে তুলনামূলক ভিড় বেশি দেখা গেল পারসোনা বিউটি পারলারে। এখানে সব রকম সেবা নিতেই আসছেন নারীরা। পারসোনার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সোহেলী আক্তার জানালেন, নারীরা চুলের ট্রিটমেন্টের জন্য স্মুদেনিং করাচ্ছেন বেশি। এতে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। একটা নেচারাল লুক আসে। এর সঙ্গে আছে হাত–পায়ের নখে জেল নেইল পলিশ ব্যবহারের আগ্রহ। চকচকে সুন্দর নখের হাতের জন্য এই সেবা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন নারীরা। থ্রি–ডি ল্যাশ লিপড অ্যান্ড ট্রিনট নামের আরেকটি সেবা যুক্ত হয়েছে পারসোনায়। চোখের পাপড়ি কয়েক মাস ঘন দেখাবে তাতে। মাশকারা ব্যবহার না করে এবং রোজকার স্বাভাবিক পানি ব্যবহারের পরও চোখের পাপড়ি ঘন দেখানোর সেবা নিতে আসছেন অধিকাংশ নারী।

সোহেলী জানালেন, এটা বিয়ের মৌসুম না হলেও কিছু কিছু মেকওভারের ক্লায়েন্ট আসছেন। শুক্রবারও তাঁদের তিনটি কনেকে সাজিয়ে দিতে হয়েছে।

নানা রকম ফেসিয়াল, ম্যানিকিউর, পেডিকিউরের কাস্টমার সব সময়ই থাকে।

পারসোনায় সেবা নেওয়ার লাইনটিও একটু দীর্ঘ। কাউন্টারে দাঁড়াতে হচ্ছে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে।

ধানমন্ডির পিংক হেয়ার অ্যান্ড বিউটি কেয়ারে তুলনামূলক ভিড় বেশ কম। বেলা দুইটার দিকে সেখানে পাঁচজন সেবা নিচ্ছিলেন। তাঁদের অধিকাংশই চুলের যত্ন করাচ্ছেন। এখানকার সহকারী কবরী দাজেল প্রথম আলোকে বললেন, চুলে মেহেদি দিতে, ব্লিচ করাতে আসেন নারীরা। নানা রঙের স্টিক চুলে লাগালে সাধারণত তিন থেকে চার মাস থাকে। ব্লিচ করালে মেয়াদটা বেশি। ইদানীং চুলে রং করানোর আগ্রহটা বেড়েছে। সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা কম হওয়ায় করোনা সতর্কতা ভালোভাবে মানতে পারছে বিউটি পারলারটি।

পরিচিত এই বিউটি পারলারগুলোতে তা–ও কমবেশি সেবাগ্রহীতা আছেন, তবে ছোট পারলারগুলোতে একেবারেই ভিড় নেই। করোনা সতর্কতা মানার চেষ্টাও নেই তেমন একটা।

কাঁঠালবাগানের স্টাইল বিউটি পারলারে দেখা গেল, সব চেয়ারই শূন্য। সকালের দিকে দুজন সেবাগ্রহণকারী এসেছিলেন। দুপুরে কেউ আসেননি। পারলারের স্বত্বাধিকারী শিরিন আক্তার জানালেন, তাঁর পারলারটি গলির ভেতরে বলে এমনিতেও যে খুব জমজমাট থাকে তা নয়, তবে উৎসব হলে গ্রাহক বাড়ে। এবারের ঈদে একদমই মানুষ নেই। তাই গ্রাহকের অপেক্ষায় বসে আছেন তাঁরা।