গরম তরলে লাইলীর শরীর ঝলসে দেন কলেজশিক্ষিকা

নারী নির্যাতন
প্রতীকী ছবি

গৃহকর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে কিশোরী লাইলী বেগমকে (১৬) যেতে দেওয়া হয়নি বাড়ি। নানা উপায়ে চলত শারীরিক নির্যাতন। নির্যাতনে এক পর্যায়ে গরম তরল পদার্থ দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয় লাইলীর শরীর। এতে গুরুতর জখম হয় তার চোখ–মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ।

রাজধানীর পিলখানা এলাকায় লাইলী হত্যার ঘটনায় আদালতে জমা দেওয়া পুলিশের অভিযোগপত্রে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্রটি জমা দেওয়া হয়।

গত বছরের ১ আগস্ট পিলখানার বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের শিক্ষক কোয়ার্টার থেকে লাইলীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ শিক্ষিকা ফারজানা ইসলামের বাসায় কাজ করতো সে। এ ঘটনায় লাইলীর মা সামেলা খাতুন বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় ফারজানার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে ফারজানাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ৪ এপ্রিল ফারজানার বাসায় কাজে যোগ দেয় লাইলী। এরপর থেকেই তার ওপর নির্যাতন চলছিল। কাজে যোগ দেওয়ার পর কখনো লাইলীকে বাড়িতে যেতে দেওয়া হয়নি। এমনকি মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগও দেওয়া হতো না।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ জানায়, ফারজানা লাইলীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। গরম তরল পদার্থ দিয়ে তার শরীর ঝলসে দেওয়া হয়। তার চোখ, মুখ, কোমর, হাঁটুসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর জখম রয়েছে।

লাইলী হত্যা মামলায় ১১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষক–শিক্ষিকাও রয়েছেন। এক শিক্ষিকা পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে লাইলীর ওপর নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, নানাজনের কাছ থেকে শুনেছেন, লাইলীকে ঠিকমতো খাবারও দিতেন না ফারজানা।

এদিকে আসামিপক্ষ আদালতে দাবি করেছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ফারজানা জড়িত নন।

এ বিষয়ে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স. ম. কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গৃহকর্মী লাইলীকে নানা অজুহাতে নির্যাতন করতেন শিক্ষিকা ফারজানা ইসলাম। আমাদের তদন্তেও উঠে এসেছে, ফারজানার নির্যাতনে লাইলীর মৃত্যু হয়। ফারজানার স্বামী ইউসুফ আলী মাসুদ বিদেশে থাকেন।’

কিশোরীর লাইলীর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের জাহেরাবাদ গ্রামে। শৈশবেই তার বাবা মারা যান। এরপর গৃহকর্মীর কাজ করে মেয়েকে বড় করে তোলেন মা সামেলা। আসামি ফারজানার স্বামী ইউসুফ আলী মাসুদ একই গ্রামের বাসিন্দা। এই দম্পতি লাইলীকে ঢাকায় তাঁদের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে নিয়ে আসেন।