গরুর মাংস গেল শাহনাজ বেগমের ঘরে

ঈদ উপলক্ষে মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ বেগমের বাসায় গরুর মাংস ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য পাঠিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলামছবি: সংগৃহীত

অভাবের সংসারে অন্তত ঈদের দিন সন্তানদের গরুর মাংস খাওয়ানোর ইচ্ছে ছিল শাহনাজ বেগমের। সে জন্য গতকাল শনিবার কাজ ফেলে ছুটে গিয়েছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সুলভ মূল্যে মাংস, ডিম ও দুধ বিক্রির গাড়ির পেছনে। লাইনেও দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যতক্ষণে তাঁর পালা এল, ততক্ষণে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি শেষ হয়ে যায়। তিনি শুধু ডিম আর দুধ কিনতে পেরেছিলেন।

সুলভ মূল্যে মাংস কিনতে না পারায় এ বছর ঈদে আর গরুর মাংস খাওয়া হবে না, আক্ষেপের সুরে কথাটি বলেছিলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার গৃহকর্মী শাহনাজ বেগম। পরে ‘ঈদে গরুর মাংস খাওয়া হচ্ছে না শাহনাজদের’ শিরোনামে তাঁর কষ্টের খবর ছাপা হয় প্রথম আলো অনলাইনে।

সংবাদটি চোখে পড়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের। পরে তিনি শাহনাজের পরিবারের জন্য গরুর মাংস আর ঈদে প্রয়োজনীয় অন্যান্য বাজার পাঠানোর উদ্যোগ নেন।

আজ রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মোহাম্মদপুরের টিক্কাপাড়া এলাকায় শাহনাজ বেগমের বাসায় মেয়র আতিকুল ইসলামের পাঠানো মাংস ও অন্যান্য সামগ্রীর উপহার নিয়ে যান মেয়রের সহকারী একান্ত সচিব ফরিদ উদ্দিন। সেই উপহারে ছিল সাড়ে ৩ কেজি গরুর মাংস, ১টি লাচ্ছা সেমাই ও ২টি লম্বা সেমাইয়ের প্যাকেট, ১ কেজি গুঁড়া দুধ, ১টি নুডলসের প্যাকেট, ২ কেজি করে পোলাওয়ের চাল ও চিনি, ২ লিটার সয়াবিন তেল ও রান্নার বিভিন্ন মসলা। এ ছাড়া ঈদে কিছু কেনাকাটা করতে শাহনাজের হাতে ২ হাজার টাকাও তুলে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

ফরিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদটি মেয়র শনিবার রাতেই দেখতে পান। পরে তিনি শাহনাজ বেগমের পরিবারকে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন। মেয়রের নির্দেশেই তাঁদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

সন্ধ্যায় শাহনাজ বেগম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়র আমার পরিবারকে সহায়তা পাঠিয়েছেন। আমার অনেক ভালো লেগেছে। আমি অনেক খুশি হয়েছি। মেয়রকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ যাতে তাঁকে অনেক ভালো রাখেন। প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।’

শাহনাজ বেগম আরও বলেন, ‘আমার সন্তানেরা পড়াশোনায় ভালো। তাদের পড়াশোনার খরচের জন্য কোথাও যদি সহায়তা পাওয়া যায়, তাতে উপকার হবে।’

শাহনাজ বেগমের বাসা মোহাম্মদপুরের টিক্কাপাড়া এলাকায়। স্বামী শওকত আলী চার বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তিনজনই উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। তাঁর একার রোজগারেই সংসার চলে। সন্তানেরা পড়াশোনায় ভালো, তাই কষ্ট হলেও সন্তানদের পড়াশোনা করাচ্ছেন। সম্প্রতি ছেলেটি পড়াশোনার পাশাপাশি একটি দোকানে বিক্রয়কর্মীর কাজ নিয়েছেন। ছেলের উপার্জনের টাকায় অন্তত সন্তানদের পড়াশোনার খরচটা আসবে বলে আশা করছেন তিনি।