চালকসংকটে আবর্জনার স্তূপ

কারওয়ান বাজারের ময়লা অপসারণের কাজ করত যান্ত্রিক শাখার ডাম্প ট্রাকগুলো। কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকে ওই শাখার ট্রাক আর ময়লা নিতে আসছে না।

সড়কের ওপর এভাবেই আবর্জনা স্তূপ হয়ে আছে। গতকাল কারওয়ান বাজারেছবি: আশরাফুল আলম

চালকসংকটের কারণে রাজধানীর অন্যতম পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারের বর্জ্য অপসারণ করতে পারছে না ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ফলে এ বাজারের ময়লা-আবর্জনাগুলো জমে আছে, যা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ময়লার স্তূপে সংকুচিত হয়েছে সড়কও।

গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, ডিএনসিসির অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পাশ ঘেঁষে কাঁচামালের আড়তের সামনে উত্তর দিকে প্রায় ৫০ গজ লম্বা বর্জ্যের স্তূপ। ময়লার স্তূপে কারওয়ান বাজারের প্রায় চার লেনের বড় মূল সড়কটি এক লেনের সরু রাস্তায় পরিণত হয়েছে। যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ও পচে তরল বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে।

ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, কারওয়ান বাজারের ময়লা অপসারণের কাজ করত যান্ত্রিক শাখার ডাম্প ট্রাকগুলো। কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকে ওই শাখার ট্রাক আর ময়লা নিতে আসছে না।

গত ২৫ নভেম্বর কারওয়ান বাজার থেকে বর্জ্য নিয়ে আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে যাচ্ছিল ডিএনসিসির একটি ডাম্প ট্রাক। পথে রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় বসুন্ধরা সিটি শপিং সেন্টারের বিপরীত পাশের সড়কে সংবাদকর্মী আহসান কবীর খানকে চাপা দেয় ওই ট্রাক। এতে তিনি মারা যান। পরী-৫১২৮ নম্বরের আইচার কোম্পানির ওই ট্রাক চালাচ্ছিলেন বহিরাগত চালক মো. হানিফ ওরফে ফটিক।

মূলত এরপরই চালকসংকট শুরু হয়। কারণ, যান্ত্রিক শাখার বেশির ভাগ ট্রাক চালানো হতো বহিরাগত চালকদের দিয়ে। করপোরেশনের স্থায়ী চালকদের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কঠোর হলে চালকসংকট দেখা যায়।

ডিএনসিসির অঞ্চল-৫–এর সহকারী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মফিজুর রহমান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত কারওয়ান বাজারে দৈনিক ৮০-৯০ টন আবর্জনা হয়। এখন সবজির সময় হওয়ায় প্রতিদিন ১৩০-১৪০ টন বর্জ্য হচ্ছে। এর বেশির ভাগ বর্জ্য অপসারণ করা যাচ্ছে না।

যান্ত্রিক শাখায় ডাম্প ট্রাক আছে ৩৩টি। এর মধ্যে সচল আছে ২৯টি। কিন্তু ভারী যান চালানোর বৈধ লাইসেন্স আছে, এমন চালক আছে মাত্র ১০ জন। তাই বাকি ১৯টি গাড়ি কাজে পাঠানো যাচ্ছে না।

দুর্ঘটনার আগে যান্ত্রিক শাখার ডাম্প ট্রাক ও চালকের তালিকা অনুযায়ী, ৩৩টি ট্রাকের বিপরীতে স্থায়ী চালক ছিল মাত্র সাতজন। বাকিদের মধ্যে শ্রমিক ৯ জন, উচ্ছেদকর্মী ৫ জন, বহিরাগত চালক ৫ জন, স্কিন লেবার ২ জন এবং ১ জন করে মেশিন অপারেটর ও ফিটার গাড়ি চালাতেন।

এদিকে রাতে ময়লা নেওয়ার কারণে কারওয়ান বাজারে কাজ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত ময়লা নিতে হয়। কিন্তু কারওয়ান বাজারে সারা রাত বাজার বসে। তখন ময়লার কাজ করা যায় না।

এ বিষয়ে যান্ত্রিক শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম বলেন, দুর্ঘটনার পরই কারওয়ান বাজারের বর্জ্য অপসারণের কাজ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (আউটসোর্সিং) হাতে দায়িত্ব যায়।