ঝলমলে রাজধানীর মলিন জীবন

ছোট্ট ঘরে বাস করে একই পরিবারের ৮ থেকে ১২ জন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে উঠছে শিশুরা। রাজধানীর ধলপুরের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কলোনিতে। গতকাল সকালেছবি: হাসান রাজা

বাংলাদেশ যেসব উন্নয়ন ইস্যুতে সংগ্রামরত, তার একটা জাতিসংঘ গৃহীত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)’। এসডিজির মূল অঙ্গীকার ‘কাউকে পিছিয়ে রাখা যাবে না’। সমৃদ্ধির ভাগ যাবে সবার ঘরে।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য বা এমডিজিতে বাংলাদেশ ভালো করেছিল। করোনার আগে দারিদ্র্য প্রায় অর্ধেক কমিয়ে ফেলা গিয়েছিল। ফলে এসডিজিতে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে বিশ্বের অনেকে। কিন্তু জাতীয় উন্নয়নের আয়োজনে দেখা যাচ্ছে, খোদ রাজধানীতে ছোট ছোট অনেক জনজাতি এখনো ‘পিছিয়ে’। কেবল অর্থনৈতিকভাবে নয়, ভাষা-সংস্কৃতি-ধর্মীয় ভিন্নতাসহ তারা এসডিজির দেশীয় নীতিনির্ধারকদের কাছে শনাক্ত হতে চাইছে।

রাজধানীর অচেনা ‘অপর’

ঢাকা এখন মধ্যম আয়ের দেশের রাজধানী। চারদিকে অর্থ, সম্পদ আর উন্নয়নের আলাপ। কিন্তু মূল ছায়াছবির আড়ালেই আছে নগর-দারিদ্র্যের কিছু বেমানান দৃশ্য। ঝলমলে ঢাকার ভেতরই সেঁটে আছে কানপুরি, তেলেগু, রবিদাস, ঋষিসহ হরেক রকম মানুষের টানাপোড়েনের বেমানান জীবন। তাঁরা আছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। আছে শহরবাসীর প্রয়োজনে। কিন্তু তাঁদের জন্য এই নগরের মানুষের অঙ্গীকার দুর্বল। তাঁদের সংখ্যা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি কোনো ঠিকানায় সঠিক হিসাবপত্তরও মেলে না। সরেজমিনেই খুঁজতে হলো সামাজিক বাস্তবতা।

কয়েক শ বছরের পুরোনো এই ঢাকা শহরে অবাঙালি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কলোনি আছে ১৭টি। পাশাপাশি রয়েছে রবিদাস ও ঋষিদের অনেক ‘পাড়া’-‘মহল্লা’। সবার জীবনধারাই দলিততুল্য। পেশা যদিও আলাদা। রবিদাস ও ঋষিরা সংখ্যায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার। জুতা তৈরি, সেলাই ও চামড়ার বিবিধ কাজ করেন। শিক্ষার সূত্রে ছড়িয়ে পড়ছেন অন্য পেশাতেও।

কানপুরি ও তেলেগুর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। এই তেলেগু, কানপুরি, রবিদাস ও ঋষিরা ইদানীং নিজেদের ‘দলিত’ পরিচয়ে শনাক্ত করছেন। অনেক এলাকায় এই পরিচ্ছন্নতাকর্মী-সমাজ আছে ‘হরিজন’ পরিচয়েও। কোনো কোনো কলোনি শত শত পরিবারের। ৫-১০ পরিবারের খুদে মহল্লাও অনেক।

ঋষি ছাড়া কেউ বাঙালি নয়। বিশাল এই শহরে মূলধারার কাছে তারা ভাষা-সংস্কৃতিতে ‘অপর’। অনেকখানি অচেনাও বটে।

দেশজুড়ে এ রকম মানুষ আছে প্রায় অর্ধকোটি। আওয়ামী লীগের ২০১৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে এই দলিতদের স্বীকৃতি আছে।

ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ধলপুরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিবাস এটি। পাঁচ ফুট দৈর্ঘ্য আর সাড়ে সাত ফুট প্রস্থের ঘরে মা, বাবা, স্ত্রী আর তিন সন্তান নিয়ে থাকেন এই পরিচ্ছন্নতাকর্মী
ছবি: হাসান রাজা

প্রধান সমস্যা বাসস্থান

ভূমিহীনতা ‘পিছিয়ে পড়া’ এই মানুষদের বড় বৈশিষ্ট্য। অথচ কয়েক প্রজন্ম ধরে এই মানুষেরা রাজধানীতে আছেন। ঢাকা দেশের প্রধান শহর হয়ে উঠতে পেরেছে তাঁদের সহায়তা পেয়েই। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লাখ লাখ মানুষকে এ শহর নিজস্ব ঠিকানা দিয়েছে। কিন্তু দলিতদের অস্থায়ী এবং অতি অপরিসর কলোনি-জীবন শেষ হয় না। সরকারি খাসজমিতেই তাঁদের বসবাস-উচ্ছেদ-পুনর্বাসন। অনেক কলোনি কয়েকবার উচ্ছেদ হয়েছে। গণকটুলীর কলোনিবাসীরা একদা ছিলেন পলাশীতে। গাবতলীর বাসিন্দারা ছিলেন মোহাম্মদপুরে। ধলপুরের তেলেগুরা ওয়ারী ও সায়েদাবাদ হয়ে ১৯৯০-এ এখনকার জায়গায় থিতু হন।

রবিদাসরা কোথাও কোথাও সরকারিভাবে বরাদ্দ করা জমিতেই থাকছেন। সেই ১৯৪৩ সালে ওয়ারীতে ২৮টি রবিদাস পরিবারকে ৯৯ বছরের ইজারায় একটা থাকার জায়গা দেওয়া হয়। আজ ৭৭ বছর পর ওই কলোনিতে পরিবারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২০টিতে। জায়গা বাড়েনি।

সরেজমিন এ–ও দেখা গেল, সরকার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ভবন বানাচ্ছে। ধলপুরে দুটি ভবন উঠেছে; ১২০টি পরিবার থাকতে পারবে। ওয়ারীতে ২৪০টি পরিবার থাকার মতো তিনটি ভবন হয়েছে। গণকটুলী ও গাবতলীতে অনেক বহুতল বাড়ি তৈরি হচ্ছে। নাজিরাবাজারেও দুটি ভবনের কাজ চলছে। এসব ভবনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসন সমস্যা কিছুটা মিটবে। সবটা নয়। মানুষের তুলনায় ভবন কম। ধলপুরে নতুন বাড়িগুলোতে ১২০টি পরিবার থাকতে পারবে। কিন্তু পরিবার আছে ২০৫টি। নাজিরাবাজারে ৭০০ ঘরের বিপরীতে দুটি ভবনে জায়গা পাবে সর্বোচ্চ ১০০ পরিবার। বাকিদের থাকতে হবে আগের দেড় রুমের ঘরেই। কারা নতুন ভবনে ঠাঁই পাবে, কারা পাবে না, তা সুস্পষ্ট নয়।

পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা আবাসন সুবিধার জন্য লড়ছে কয়েক প্রজন্ম ধরে—সবাই মিলে। কিন্তু যেসব পরিবারের সিটি করপোরেশনের চাকরিধারী কেউ নেই, তাদের নতুন বাসা বরাদ্দ পেতে বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার শঙ্কা আছে। সরকারের উদ্যোগ শুভ। তবে ধলপুরসহ বিভিন্ন স্থানে তা বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হচ্ছে কলোনির ‘পঞ্চায়েত’-এর মাধ্যমে।

নাজিরাবাজারে অন্তত ১৬০টি পরিবার আছে, যাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সরকারি কাজ নেই। গণকটুলীতেও চাকরি থাকাদের চেয়ে না-থাকাদের পাল্লা ভারী। নতুন ভবনে জায়গা পেতে এ রকম পরিবারগুলো নীতিনির্ধারকদের আশ্বাস চাইছে।

ছোট ঘরটিকেই নিজেদের মতো করে সাজিয়ে রাখেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা
ছবি: হাসান রাজা

স্বাস্থ্যচিত্র করুণ

ঘিঞ্জিময় কলোনিগুলোর স্বাস্থ্যচিত্র করুণ। গাবতলীর ছোট্ট কলোনিটিতে ৩০টি পরিবার থাকে। গোসলখানা একটি। সেটিও উন্মুক্ত। শৌচাগার বা টয়লেট আছে প্রতি পাঁচ পরিবারের জন্য একটি। ২০৫ পরিবারের ধলপুর কলোনিতে গোসলখানাই করা হয়নি। এখানে ৩০টি গণশৌচাগার আছে। তার সামনে যে চাপকল, সেখানেই গোসল করেন পুরুষেরা।

নারীরা যাঁর যাঁর রান্নাঘরের থালাবাটি ধোয়ার জায়গায় বাইরে থেকে পানি এনে কোনোভাবে গোসল সারেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বৃহত্তম কলোনি হিসেবে বিবেচিত নাজিরাবাজারে টয়লেট আছে ২০-২১টি। ১০-১২ হাজার মানুষের ‘খাওয়ার পানি’ সংগ্রহের জায়গা মাত্র একটি। পানি সংগ্রহের জন্য রাতে নারীদের লাইন দিয়ে দাঁড়াতে দেখা গেল। ইচ্ছা থাকলেও এসব কলোনিতে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন দুরূহ। পেটের পীড়া, সর্দি-কাশি লেগে থাকে।

২২ নম্বর ওয়ার্ডের গণকটুলী কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে অজ্ঞাত কারণে কিডনির সমস্যা ও ক্যানসার আক্রান্তের কথা জানা গেল। টাকার অভাবে প্রাথমিক অবস্থায় দরকারি চিকিৎসাটুকু শেষ করতে না পেরে মৃত্যুর মুখে পড়ছেন কেউ কেউ। ৫৫০টি পরিবারের এই কলোনিতে গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসায় সংকটের কথা জানালেন প্রায় সবাই। নবজাতকদের টিকায়ও ব্যাঘাত ঘটছে। আশপাশে একটা নারীবান্ধব ক্লিনিকের দাবির কথা জানালেন কলোনির নেত্রী মনিরাণী দাস। ধলপুরের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বড় স্বাস্থ্য সমস্যা ডেঙ্গুর আধিক্য।

‘চাকরির অভাব’

দলিত পরিবারগুলোর মধ্যে একটি ইতিবাচক দিক হলো শিক্ষার প্রসার, যা হয়েছে গত দুই দশকে। বাবা হয়তো কোথাও রোদ-বৃষ্টিতে জুতা সেলাই করেন, কিন্তু সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন। তবে কলোনির চরম ঘনবসতিতে বই-খাতায় মনঃসংযোগ কঠিন। কলোনিতে নভেম্বর-ডিসেম্বর এলেই মাইক বাজিয়ে বিয়ের ধুমধাম শুরু হয়। এ সময়ই থাকে বার্ষিক পরীক্ষা। কিশোর-কিশোরীদের ভাষায় ‘কলোনিতে পড়ার পরিবেশ নাই।’ পাশাপাশি ‘গুণগতভাবে উন্নত শিক্ষার ঘাটতি’র কথা জানালেন ধলপুরের তেলেগু স্কুলের সভাপতি এ যোশেফ দাস। একই আফসোস নাজিরাবাজারে ‘হরিজন সংগঠক’ গগন লালের।

এসব কারণে কলোনির কিশোর-কিশোরীরা স্কুলের পরীক্ষায় পাস করলেও ভালো ‘গ্রেড’ পায় না। শিক্ষার পরের ধাপে ঢুকতে সমস্যা হয়। এর মাঝেই রবিদাস সংগঠক শিপন কুমার গর্বের সঙ্গে জানালেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে তাঁদের ২৩ জন শিক্ষার্থী আছেন।

২০১৩ থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দলিত কোটায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে সর্বত্র। সেই কোটা এখনো আইনি মর্যাদা পাওয়ার সংগ্রামে আছে এবং এখনো প্রাথমিক পর্যায়ের দলিত শিক্ষার্থীর ১-২ শতাংশের বেশি স্নাতক স্তর ডিঙাতে পারছে না। অভাব গুণগত শিক্ষার। বেকারত্বও ভয়াবহ। গণকটুলীতে রূপালি রাণী দাসের সঙ্গে পরিচয় হলো। তাঁরা দুই বান্ধবী ইডেন থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা। উভয়ে বেকার। এ রকম তরুণ-তরুণী অনেক।

তারপরও তাঁদের চোখে অতীতকে অতিক্রমের স্বপ্ন। ২০ ফুট গুণ ১২ ফুটের ঘরগুলোতে ঠাসাঠাসির মাঝেই তেলেগু, কানপুরি শিশু-কিশোররা পড়ছে। তেলেগুরা ধলপুর ও ওয়ারীতে দুটি স্কুলও চালাচ্ছে। ধলপুরে এক পরিবারে তিনজন গ্র্যাজুয়েট পাওয়া গেল, যা এক বিরল চিত্র।

খাচ্ছে দুই শিশু।
ছবি: হাসান রাজা

করোনাকালে দারিদ্র্য

যতই উচ্চশিক্ষিত হোক, দলিত ছেলেমেয়েদের আজও পরিচ্ছন্নতার কাজ ছাড়া অন্য কিছুতে ভাবতে অভ্যস্ত হয়নি দেশের ‘মূল সমাজ’। এ রকম পরিবারগুলো সরকারি জায়গায় বাসস্থান টিকিয়ে রাখতে যেকোনোভাবে সিটি করপোরেশনের ময়লা পরিষ্কারের কাজ চায়। সেই চাকরি পেতে ‘টাকা লাগে’ বলে অভিযোগ। তবে লেনদেন ছাড়াও চাকরি হওয়ার নজির আছে। ঢাকা দক্ষিণে সম্প্রতি অনেকের ‘মশককর্মী’র চাকরি পেতে ‘কিছু লাগেনি’।

অনেক দাম দিয়ে ‘চাকরি কেনা’ এই মানুষদের জন্য সহজ নয়। ফলে শহরের ময়লা পরিষ্কারের কাজে পুরোনো ‘সুইপার সমাজের’ একচেটিয়াত্ব আর নেই। ঢাকায় এ কাজে যুক্ত ৮ থেকে ১০ হাজার কর্মীর মধ্যে তাঁদের সংখ্যা ইতিমধ্যে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০–তে নেমে গেছে বলে অনুযোগ সবার। পূর্বপুরুষের পেশায় বাড়তি হিস্যা চায় এই সম্প্রদায়। ধলপুর কলোনিতে দেখা গেল ২০৫টি পরিবারের ৭২টিতে সিটি করপোরেশনে কাজ আছে। বাকিরা বেসরকারি নানান প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন। করোনায় অনেকের কাজ বন্ধ। পাননি মজুরিও। রবিদাস জনগোষ্ঠীতে অনেক নারী থেরাপির (ম্যাসাজ করা) কাজ করে ভালো আয় করতেন। করোনায় সেটাও বন্ধ। পুরুষেরা অনেকে জুতার কাজ ছেড়ে সেলুন দিয়েছিলেন। মন্দার ছোবল সেখানেও।

নারী সংগঠনগুলোর মনোযোগ দরকার

দলিত কলোনিতে সবচেয়ে বিপন্ন দশা নারীর। ঘরবন্দী জীবন। পুরুষেরা নারীদের ‘মহল্লার বাইরে’ যেতে দিতে নারাজ। কোথাও কোথাও ধীরে ধীরে সেসব প্রথা ভাঙছে। নাজিরাবাজারে দেখা গেল পরিবর্তনের ঢেউ অতি মৃদু। সেখানে মাদকের সমস্যা আর তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে নারী নির্যাতনের কথাও জানালেন কয়েকজন তরুণী। ধলপুরেও এখনো অন্তত ৩০ শতাংশ পুরুষের মধ্যে মদ পানের অভ্যাস রয়ে গেছে। নারী নিপীড়ন এখনো ‘ঘরের নিজস্ব ব্যাপার’ হয়ে আছে।

প্রায় সর্বত্র ১৮-এর আগেই মেয়েদের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়। যৌতুকের হারও বিপুল। উপহার হিসেবে মোটরসাইকেলের ব্যাপক চল। ন্যূনপ‌ক্ষে ‘ঘর সাজিয়ে দিতে হয়’। বিয়েতে জাত-পাতের বিবেচনাও বিস্তর। জাতের বাইরে শাদি করে নিয়ম ভাঙলে অনেক খরচপাতি করে পঞ্চায়েতের বর্জনের হাত থেকে রেহাই মেলে। পঞ্চায়েতমাত্রই সিদ্ধান্ত গ্রহণে পুরুষ-একচেটিয়াত্ব। এসব বদলাতে নারী সংগঠনগুলোর মনোযোগ চাইছেন সেখানকার নারীরা।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাস
ছবি: হাসান রাজা

অস্পৃশ্যতা কমছে

তেলেগু, কানপুরি, রবিদাস, ঋষি অনেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বী। পূজা-পার্বণে মূলধারার মন্দিরে উচ্চবর্ণের তরফ থেকে সমানাধিকার পেতে সমস্যায় পড়ে কেউ কেউ। অস্পৃশ্যতার অতীত সামনে এসে দাঁড়ায়। তবে সমাজের নিচুতলায় সেসবের প্রকোপ কমছে। ধলপুরে কলোনির দরজাতেই দেখা গেল খ্রিষ্টান তেলেগু পিটারের বিরিয়ানির দোকান। অনেক ক্রেতা মুসলমান পরিচ্ছন্নতাকর্মী। পিটার স্থানীয় তেলেগু স্কুলে বাচ্চাদের অঙ্ক শেখান। আর বাকি সময় এই কাজ করেন। সহজ শর্তে আর্থিক সহযোগিতা এবং প্রশিক্ষণ পেলে এসব কলোনির অনেক তরুণ-তরুণী রোজগারের এ রকম হরেক কাজে নামতে পারতেন।

কিছু বেসরকারি সংগঠন এদের অবস্থা বদলাতে কাজ করছে। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য অবাঙালি এসব পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মুক্ত করা। তাদের মর্যাদাবোধ জাগিয়ে সামাজিক নেতৃত্ব তৈরি। এ রকম উদ্যোগেরই একজন সংগঠক জাকির হোসেনের ভাষায়, এই শহুরে দরিদ্রদের মূলধারার সামাজিক-রাজনৈতিক পরিসরে টেনে আনা ছাড়া এসডিজির লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব। উন্নয়ন চিন্তায় এদের শনাক্ত করা জরুরি। সেই চেষ্টা আছে। তবে গতি বাড়াতে হবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি এসব জনগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষায় জরুরি হয়ে পড়েছে সাংস্কৃতিক একাডেমি করা। দলিতদের সবার জন্য একটি হলেও তেমন কিছু করা যেতে পারে ঢাকায়।

নিজস্ব ভাষা টিকিয়ে রাখতে কয়েকটি কলোনিতে দেখা গেল তেলেগু বয়োজ্যেষ্ঠদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী চেষ্টা। ভাষাগুলোর শেখাপড়া বাড়াতে সিটি করপোরেশন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের সুযোগ আছে। বহুভাষী মানুষের বর্ণিল রাজধানী যেকোনো দেশের গৌরব বাড়ায়।

আলতাফ পারভেজ: গবেষক