ঢাকায় অবকাঠামো নির্মাণে সিটি করপোরেশনের অনুমোদনের প্রস্তাব অপরিণামদর্শী: ইকবাল হাবিব

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম গতকাল রোববার বলেছেন, ঢাকা মহানগরে যেকোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করার জন্য রাজউকের পাশাপাশি দুই সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিতে হবে। এ পরিকল্পনা বা প্রস্তাব কতটুকু যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন নগরবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পার্থ শঙ্কর সাহা

নগরবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, এখন থেকে ঢাকা মহানগরে যেকোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করার জন্য রাজউকের পাশাপাশি দুই সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিতে হবে। কীভাবে দেখছেন এ নির্দেশনাকে?

ইকবাল হাবিব: এ প্রস্তাব দ্বৈত করারোপের মতো অহেতুক জনগণকে অতিরিক্ত ভোগান্তির মধ্যে ফেলবে। যখন সরকার ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’-এর বিনিয়োগবান্ধবতা নিশ্চিতে ভোগান্তি কমানোর জন্য বদ্ধপরিকর, তখন এ মতবাদ সাংঘর্ষিক ও অবাঞ্ছিত।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: রাজউকের কাছ থেকে অনুমোদন, এর বাস্তবায়ন ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা-অনিয়মের অভিযোগ আছে। এরই মধ্যে মানুষের জটিলতা কি আরও বেড়ে গেল?

ইকবাল হাবিব: অবশ্যই। এর ফলে ভিন্ন ভিন্ন অনুমোদন শর্তের পারস্পরিক বৈপরীত্যের নিয়মিত শিকার হবেন অনুমোদন প্রার্থীরা। অতিরিক্ত ভোগান্তির পাশাপাশি সময় আর আর্থিক অপচয় তো রয়েছেই।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: অবকাঠামো নির্মাণে দুই সিটির অনুমোদনের এ প্রশ্নই হঠাৎ কেন এল বলে আপনার মনে হয়?

ইকবাল হাবিব: দায়মোচন। এত দিনের জবাবদিহিবিহীন কার্যক্রমে হাঁপিয়ে ওঠা এ শহরের দ্রুত সমাধান খোঁজার দুর্বিনীত চেষ্টার ফল এ অপরিণামদর্শী প্রস্তাব।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সময়ের বাস্তবতায় যখন অনুমোদন কার্যক্রম আরও সূক্ষ্ম ও সরল করা দরকার, তখন আরেকটা প্রতিষ্ঠানকে জড়ানো হলো। দ্রুত বর্ধনশীল শহর ঢাকার জন্য এটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?

ইকবাল হাবিব: এ ক্ষেত্রে বরং জনপ্রতিনিধিত্বকারী সেবাধর্মী সিটি করপোরেশনগুলোর মাধ্যমেই অন্য সব সংস্থার অনুমোদন কার্যক্রমও নিশ্চিত করা যেতে পারে, তবে সে ক্ষেত্রে ‘রাজউকে’র বিলুপ্তির মধ্য দিয়েই তার বাস্তবায়ন উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। তাকে রেখে অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক ভোগান্তি চাপিয়ে দিয়ে নয়।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এর আগে রাজধানীর খালগুলো ওয়াসার কাছ থেকে সিটি করপোরেশনকে দেওয়ার ব্যাপারে কথা হয়েছে। দুই সিটি মেয়র বলেন, খালগুলো তারা না পেলে জলাবদ্ধতা নিরসন দুরূহ হয়ে যাবে। কতটুকু বাস্তবানুগ তাদের এই চাওয়া?

ইকবাল হাবিব: সর্বাঙ্গীণ সমন্বয় নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনগুলোকে প্রয়োজনীয় কারিগরি ও অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমেই খাল-জলাধারের মতো গণপরিসর উন্নয়ন বাস্তবায়ন যুক্তিযুক্ত। এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করাও সম্ভব হবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: পরিকল্পনাহীনতা ঢাকা বেড়ে ওঠার একটা খুব বড় বৈশিষ্ট্য হিসেবে কাজ করেছে। এ কথা আপনারাও বলেন। নগর ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য আসলে কোন কোন শর্ত পালন করা দরকার, সেগুলো হচ্ছে কতটুকু?

ইকবাল হাবিব: কয়েকটি শর্ত আছে। এগুলো নিশ্চিত করতে পারলে মহানগর ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব বলে আমার মনে হয়। প্রথমত, পরিকল্পনাবহির্ভূত ভূমির ব্যবহার আর ব্যক্তিকেন্দ্রিক উন্নয়নধারার বিরুদ্ধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, গণপরিবহন আর সাশ্রয়ী আবাসন বিষয়ে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নগর ভূমির ওপর জনগণ তথা সরকারের নিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার শর্তেই এ নগরীর উন্নয়ন ‘প্যারডাইম’ সঠিক পথ খুঁজে পেতে পারে।