আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে বলেই ছাত্রাবাসে এসেছিল: ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ
ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাত্রাবাসে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ টি এম মইনুল হোসেন৷ তাঁর দাবি, এটি কোনো ‘অভিযান’ ছিল না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার আলামত উদ্ধারের জন্য ছাত্রাবাসে গিয়েছিল।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজের একটি ছাত্রাবাস থেকে এক ছাত্রলীগ নেতাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে রাতেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা কলেজের একাধিক ছাত্র জানান, ডিবি ও র্যাবের একটি দল গতকাল সন্ধ্যায় কলেজের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের একটি কক্ষ থেকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির সদস্য জহির হাসান ওরফে জুয়েলকে ধরে নিয়ে যায়। ওই কক্ষ থেকে দুটি মুঠোফোনও জব্দ করা হয়। ওই কক্ষে নিউমার্কেটের সংঘর্ষে নাহিদ হোসেন হত্যার সন্দেহভাজন বাশার ইমন থাকতেন। তবে অভিযানের সময় ইমন কক্ষে ছিলেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ টি এম মইনুল হোসেন আজ সোমবার প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, এটি কোনো অভিযান ছিল না। তাঁর ভাষ্য, ‘মামলার আলামত উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হলে গিয়েছিল। আলামত হিসেবে তারা দুটি মুঠোফোন উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। ফেরার সময় তারা এক ছাত্রকে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের অনুমতি নিয়েই তারা হলে গেছে৷ যেহেতু মামলা তার নিজের গতিতে চলবে, সে ক্ষেত্রে কাউকে বরদাশত করার বিষয় এখানে নেই। কিন্তু নিরীহ ছাত্ররা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন বা হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়টি আমরা দেখছি৷’
তবে পুলিশ গতকাল ছাত্রাবাসে যাওয়া ও ছাত্রকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেনি। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমাদের কোনো টিম ঢাকা কলেজে যায়নি। কাউকে আটকও করা হয়নি।’
এদিকে গতকালের অভিযানের পর ঢাকা কলেজের হলগুলোতে থাকা ছাত্ররা হল ছেড়েছেন। হল প্রাঙ্গণ এখন ফাঁকা।
১৮ এপ্রিল রাতে রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। নিউমার্কেটের দুটি খাবারের দোকানের দুই কর্মীর বিতণ্ডা থেকে ওই ঘটনার সূত্রপাত। এর জেরে ১৯ এপ্রিল (গত মঙ্গলবার) দিনভর রাজধানীর মিরপুর সড়কের নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে স্থানীয় বিভিন্ন বিপণিবিতানের দোকানমালিক-কর্মচারী ও হকারদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে মারা গেছেন দুজন (কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেন ও দোকানকর্মী মোহাম্মদ মোরসালিন)। আহত হয়েছেন অর্ধশত ব্যক্তি।
গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র বলেছে, সংঘর্ষের সময় হেলমেট পরে এবং ধারালো অস্ত্র হাতে শুধু ছাত্ররা নন, ব্যবসায়ী-দোকানকর্মী ও হকাররাও অংশ নেন। তাঁদের শনাক্ত করা হচ্ছে। এই অস্ত্রধারীদের মধ্যে মোট ছয়জনকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ।
তাঁরা সবাই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। ইমন ও শাহাদাৎ ছাড়া বাকি চারজন হলেন কাইয়ুম, সুজন সরকার, শাহীন সাদেক মীর্জা ও কাউসার হামিদ ওরফে সাদা কাউসার।
নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটি। আর চার মামলায় মোট আসামি ১ হাজার ৫৭৪ জন। এর মধ্যে নাম উল্লেখ করা আসামি ২৪ জন, অন্যরা অজ্ঞাতপরিচয়।
আরও পড়ুন