ঢাবিতে ‘সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উৎসব’, জুম ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন
‘বহুত্বের ঐকতানই আমাদের শক্তি, বহুত্বের উৎসবে বুনি মুক্তি’ স্লোগানে ‘সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উৎসব’ উদ্যাপন করছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ। উৎসবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে প্রকাশিত জুম ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচনও করা হয়েছে। এ ছাড়া আছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন।
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) অভ্যন্তরীণ ক্রীড়াকক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার বক্সার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ছাত্র সুরা কৃষ্ণ চাকমাকে জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
উদ্বোধনকালে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে বাঙালির চরিত্র সমন্বয়বাদী ধারায় আবর্তিত ও বিকশিত হয়েছে। সংস্কৃতির কোনো সীমানা নেই। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলো এখানে নানা ধর্ম, সংস্কৃতি, মত ও দর্শন কোনো না কোনোভাবে একটির সঙ্গে অন্যটির মিলে একটি নতুন ধারণার বিকাশ ঘটিয়েছে।
সেটিকেই আমরা বলি বাঙালি সংস্কৃতি। এর সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য ও মূল্যবোধ আছে; তা হলো অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মানবিক মূল্যবোধ। সমন্বিত মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যখন একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গড়ে ওঠে, তার স্থায়িত্ব খুব বেশি হয়। যে সাংস্কৃতিক ধারা যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়, তা তত বেশি টেকসই হয়।
সদ্য প্রকাশিত জুম ম্যাগাজিনের প্রশংসা করেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সব ধর্ম, মত ও দর্শনের মানুষের সমমর্যাদা ও স্বাধীনতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য। এই চেতনাকে ক্রমান্বয়ে আরও শক্তিশালী করাটা আমাদের একটি বড় কাজ।’
পাহাড়ি ছেলেমেয়েরা খুবই সরল। সরল বলতে তাঁরা কোনো ধরনের দুষ্ট বুদ্ধি মাথার মধ্যে কখনো রাখে না, একেবারেই সরল চিন্তা করে এবং সরলভাবে একটা কিছু ভাবে।
এই সরলতার মূল্যবোধ তাঁদের একটি অসাধারণ সম্পদ। এর ফলে তাঁদের মধ্যে সৃজনশীলতারও বিকাশ ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে। ওই সমাজ সবচেয়ে টেকসই, যেটি বহুত্ববাদী। নানা ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও নানা জাতিগোষ্ঠী—এটিই পৃথিবী নামক এই গ্রহের সৌন্দর্য। একে লালন করা খুব জরুরি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। তিনি বলেন, মুক্তির সঙ্গে বহুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালনের প্রাণকেন্দ্র। এই বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তার যে অর্গল খুলে দেয়, তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। বাস্তবতা হচ্ছে সব দেশই বহু জাতি ও বহু ধর্ম, সংস্কৃতির মানুষের দেশ। এই বাস্তবতার স্বীকৃতি যত তাড়াতাড়ি মিলবে, পৃথিবী তত বেশি গণতান্ত্রিক হয়ে উঠবে। বাঙালি একটি মিশ্র জাতি। বহু জাতির মানুষের মধ্যে সম্মিলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি এত বৃহৎ হতে পেরেছে। এর পেছনে দেশের সব জাতি ও ধর্মের মানুষের অবদান আছে। বিভিন্ন উৎস থেকে এসে আমাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার শক্তিশালী হয়েছে। জুম সংসদের আয়োজনটি খুবই ভালো আয়োজন।
জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি রাতুল তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে আলোচনাপর্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সহসভাপতি ও জুম ম্যাগাজিনের সম্পাদক সতেজ চাকমা। এই পর্বে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য ও শিক্ষক বাঞ্চিতা চাকমা প্রমুখ বক্তব্য দেন। টিএসসির ক্রীড়াকক্ষের বাইরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা আর্ট ক্যাম্প করেন। পরে সেখানে সংগীত পরিবেশন করে গানের দল মাদল।