ঢামেকে ছাত্রলীগ-কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে।
কলেজ শাখা ছাত্রলীগ বলছে, বিনা উসকানিতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা তাঁদের ওপর হামলা করেন। অন্যদিকে কর্মচারী সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একটি নিয়োগের টেন্ডারে অর্থের ভাগ পেতে কলেজ প্রশাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ কলেজের আউটসোর্সিংয়ের জনবল নিয়োগের দরপত্র জমা দেওয়ার তারিখ। এ নিয়ে সকাল ১০টায় অধ্যক্ষ টিটো মিঞার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতি। সকালে কলেজে ঢোকার সময় কর্মচারীরা ছাত্রলীগ ও পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে কর্মচারী সমিতির সভাপতি আবু সাঈদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জনবল নিয়োগের বিষয়ে সমঝোতায় আসে। এরপর তাঁরা অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
সূত্র আরও জানায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ মো. আল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক জাকিউল ইসলামের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে কর্মচারীদের ধাওয়া দিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করেন। এ সময় ১০৮ ও ১০৯ নম্বর মহিলা ওয়ার্ডে ঢুকে এক কর্মচারীকে মারধর করেন তাঁরা। একপর্যায়ে কর্মচারীরা ওয়ার্ডের ফটক বন্ধ করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় ওয়ার্ডের ভেতর ও বাইরে থেকে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। হট্টগোলের কারণে ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরে কলেজের অধ্যক্ষ টিটো মিঞা ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, একটি ভুল–বোঝাবুঝির পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাটি ঘটেছে। হাসপাতালের পরিচালক এই পরিস্থিতির জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়োগ থেকে ভাগ পেতে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা কলেজ প্রশাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। টাকার জন্য তাঁরা আমাদের ওপর হামলা করতেও দ্বিধা করেননি। কর্মচারীরা তাঁদের ওপর কোনো হামলা করেননি।’
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ মো. আল আমিন হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির একজন শীর্ষ নেতা বিএনপির লোক। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে মেডিকেলের বঙ্গবন্ধু কর্নারে ফুল দিতে যাই। তখন কর্মচারীদেরও একটি কর্মসূচি ছিল। ফটক দিয়ে কলেজে ঢোকার সময় বিনা উসকানিতে তাঁরা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিউল ইসলামসহ কয়েকজনের গায়ে আঘাত করেন।’
কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে মেডিকেলের বঙ্গবন্ধু কর্নারে আমরা ফুল দিতে যাই। হঠাৎ মেডিকেলে ঢুকে কর্মচারীরা বহিরাগত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন “একটা একটা ডাক্তার ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর।” একপর্যায়ে তাঁরা আমাদের ওপর হামলা করেন। পরে আমরা বিষয়টি কলেজ প্রশাসনকে জানালে তাঁরা বিচারের আশ্বাস দেন।’