জ্বালানি সক্ষমতা দিবস
তিন হাজার কোটি টাকার গ্যাস অপচয়
কারিগরি অপচয় বেড়েছে আগের চেয়ে। এটি বন্ধ করা গেলে ৫৮ কোটি ঘনমিটার গ্যাস আমদানি ঠেকানো যায়।
গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা ও অদক্ষতার কারণে বছরে ৬৫ কোটি ঘনমিটার গ্যাস অপচয় (সিস্টেম লস) হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ, অনুমোদনের চেয়ে বেশি ব্যবহার ও পাইপলাইনে লিকেজের (ছিদ্র) কারণে গ্যাস অপচয় হচ্ছে নিয়মিত। আগের বছরের চেয়ে অপচয় বেড়েছে গত অর্থবছরে। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, চুরি বন্ধ করে হাজার হাজার কোটি টাকার গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব। অথচ চুরি বন্ধে কার্যকর তেমন কোনো উদ্যোগ না নিয়ে ঘাটতি মেটাতে সরকার চড়া দামে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে।
পেট্রোবাংলার হিসাবে, প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানির খরচ বর্তমানে ৫০ টাকা। সে অনুযায়ী, বছরে অপচয় হওয়া ৬৫ কোটি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। তবে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ‘সিস্টেম লস’ গ্রহণযোগ্য বলে ধরা হয়। ফলে অপচয় হয় মূলত সাড়ে ৫৮ কোটি ঘনমিটার গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয় ২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা, অপচয় কমিয়ে যা সাশ্রয় করা সম্ভব।
তিতাস রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে। গত অর্থবছরে তিতাসের গ্যাস অপচয় হয়েছে ৩২ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার। কুমিল্লা এলাকায় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বাখরাবাদ গত বছর গ্যাস অপচয় করেছে ২ শতাংশের বেশি। ১৮ কোটি ৫২ লাখ ঘনমিটার গ্যাস হারিয়েছে তারা। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডে গ্যাস অপচয় নেই।
বিইআরসির দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও একজন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস সরবরাহে মূলত অপচয়ের তেমন কোনো কারণ নেই। পাইপলাইন থেকে গ্যাস বের হয়ে যাওয়ার তো সুযোগ নেই। তবে পাইপলাইনে নানা কারণে ছিদ্র তৈরি হতে পারে। আন্তর্জাতিক মান অনুসারে এতে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ২০ থেকে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ গ্যাস অপচয় হতে পারে। কাগজে-কলমের হিসাবের চেয়ে গ্যাসের প্রকৃত অপচয় আরও বেশি। অনেক গ্রাহক কম গ্যাস ব্যবহার করে বাড়তি বিল দিচ্ছেন, যার ফলে অপচয় কমিয়ে দেখানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। এভাবে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার গ্যাস চুরি হয়ে যাচ্ছে।
গ্যাস কেনার চেয়ে বিক্রি বেশি
দেশের একমাত্র গ্যাস সঞ্চালন সংস্থা ও ছয়টি বিতরণ কোম্পানিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাগজ-কলমের হিসাবে গ্যাস অপচয়ের পরিমাণ আরও বেশি। গ্যাস সঞ্চালনের একমাত্র সংস্থা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) বছরে সিস্টেম লস শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। এতে বছরে গ্যাসের অপচয় হচ্ছে ৬ কোটি ২০ লাখ ঘনমিটার। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে তাঁদের গ্যাস অপচয়ের পরিমাণ বেশি নয় বলে জানান জিটিসিএলের পরিচালক (অপারেশন) মো. তাজুল ইসলাম মজুমদার।
ছয়টি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে দুটিতে গ্যাস অপচয় নেই। কোম্পানি দুটি হলো পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। উল্টো পেট্রোবাংলা থেকে তাদের কেনা গ্যাসের চেয়ে গ্রাহকের কাছে বিক্রির পরিমাণ বেশি। গত অর্থবছরে ১ কোটি ৬ লাখ ৭৬ হাজার ঘনমিটার গ্যাস বেশি বিক্রি করেছে সুন্দরবন। একইভাবে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানিরও কেনার চেয়ে গ্যাস বিক্রি বেশি। দুটি কোম্পানি কয়েক বছর ধরে গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি বিল আদায় করছে।
অপচয়ের বদলে বাড়তি বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ দুটি কোম্পানির দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা বলেন, সঞ্চালন লাইন থেকে বিতরণ লাইনে গ্যাস আসে অতি উচ্চ চাপে। আর গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস যায় নিম্ন চাপে। তাই গ্রাহকেরা সব সময় নির্ধারিত পরিমাণে গ্যাস পান না, আবার কেউ কেউ ব্যবহারও করতে পারেন না। মিটার ছাড়া আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকের বিল নির্ধারিত থাকে। তাই গ্যাস কম নিয়েও তারা বাড়তি বিল দিচ্ছে। এর ফলে গ্যাস কেনার চেয়ে বিক্রির পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। আর্থিক হিসাবে গ্যাসের সরবরাহ বা অপচয়ের হিসাব করা হয়। তবে আবাসিকে প্রিপেইড মিটার ও শিল্পে ইভিসি মিটার বাড়তে থাকায় উদ্বৃত্ত অর্থের পরিমাণ কমে আসছে। সব গ্রাহকের কাছে মিটার পৌঁছালে গ্যাস অপচয়ের হিসাবটি সামনে আসবে।
অপচয়ে এগিয়ে তিতাস ও বাখরাবাদ
দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে। গত অর্থবছরে তিতাসের গ্যাস অপচয় হয়েছে ৩২ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার। এর আগের বছরে অপচয় হয়েছে প্রায় ৩১ কোটি ঘনমিটার। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে এ কোম্পানি। তবু অপচয় কমানো যাচ্ছে না। আর কুমিল্লা এলাকায় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বাখরাবাদ গত বছর গ্যাস অপচয় করেছে ২ শতাংশের বেশি। ১৮ কোটি ৫২ লাখ ঘনমিটার গ্যাস হারিয়েছে তারা। এর আগের বছর এটি ছিল ১ শতাংশ।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ মোল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে গ্যাস চুরি করছে অনেকে। মাত্র এক হাজার টাকার গ্যাসের জন্য এমন সংযোগ নিয়ে একটি পরিবার চুরির দায় নিচ্ছে। অবৈধ এমন ব্যবহারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চলছে। কাউকে মাফ করা হবে না। সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। লিকেজ নিয়মিত শনাক্ত করে সংস্কার করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের গ্যাস বিতরণ কোম্পানি কর্ণফুলী গত অর্থবছরে অপচয় করেছে ৫ কোটি ঘনমিটার। আর সিলেটের গ্যাস বিতরণ কোম্পানি জালালাবাদের অপচয় ২ কোটি ৬৫ লাখ ঘনমিটার। গ্যাস অপচয়ের হার কর্ণফুলীতে দেড় শতাংশের বেশি এবং জালালাবাদের ১ শতাংশের কম। দুটি কোম্পানি দাবি করেছে, তাদের কোনো অবৈধ সংযোগ নেই। তবে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের জন্য অনেক সময় পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে লিকেজ তৈরি হয়ে গ্যাসের অপচয় হয়।
জালালাবাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোয়েব আহমেদ মতিন বলেন, সিস্টেম লস কখনোই ১ শতাংশের বেশি হচ্ছে না তাঁদের। নিয়মিত নজরদারি করা হচ্ছে।
থেমে নেই অবৈধ সংযোগ
মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদিয়া হাউজিং লিমিটেডের একটি অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া থাকেন লাইজু বেগম। প্রতি মাসে গ্যাস বিল দিলেও অধিকাংশ সময় লাইনে গ্যাস পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ভবনের মালিক অবৈধভাবে গ্যাস–সংযোগ নিয়েছেন, গ্যাস থাকে না বেশির ভাগ সময়। মাঝেমধ্যে তিতাসের অভিযানের খবর পেলে আবার পুরোপুরি বন্ধ থাকে। অথচ মাসে মাসে বিল নিচ্ছে। গ্যাস না থাকায় এলপিজি দিয়ে রান্না করতে হয়। দুই দিকে খরচ করতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে।
এমন অনেক ভবনেই আছে অবৈধ গ্যাস–সংযোগ। কল্যাণপুর পাইকপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাহানা সাত্তার জানান, তাঁর ভবনে ৪০টি ফ্ল্যাট। সবার বাসায় গ্যাসের লাইন আছে। হঠাৎ করে গত জানুয়ারিতে তিতাসের একটি দল অভিযান চালিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন কর দেয়। তিন বছর ধরে প্রতি মাসে তাঁরা গ্যাস বিল দিয়ে আসছেন। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরও বাড়িওয়ালা বিল নিচ্ছেন তাঁদের কাছ থেকে। এখনো তাঁদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন আছে।
অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার শনাক্ত করতে গত অর্থবছরে ২২৫টি অভিযান চালিয়েছে তিতাস। এতে ৬১৯ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন তুলে দেওয়া হয়েছে। ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৪৯টি চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা গেছে এ অভিযানে। এ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ৮৫ হাজার ২৮৬টি চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ১৪টি এলাকায় শনাক্ত করা হয়েছে ১০১ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন।
গ্যাস কারচুপি, অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার, অনুমোদনের চেয়ে বেশি ব্যবহারের অভিযোগে গত অর্থবছরে ২ হাজার ২৩৯টি গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস। এর মধ্যে আবাসিক সংযোগ ২ হাজার ১১৭টি।
গ্যাসের পাইপলাইনে ছিদ্র
তিতাস সূত্র বলছে, প্রতি মাসে ৫০০ থেকে ৬০০ অভিযোগ আসে তিতাসের কেন্দ্রীয় জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক গ্যাস লিকেজ–সংক্রান্ত। গত অর্থবছরে (২০২০-২১) ৮ হাজার ৮৮১টি অভিযোগ আসে, যার মধ্যে গ্যাস লিকেজের অভিযোগ ৭ হাজার ৩৫টি। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ হাজার ৪১০টি অভিযোগ আসে, যার মধ্যে গ্যাস লিকেজের অভিযোগ ৪ হাজার ৪৯৬টি। তবে আগের তুলনায় অগ্নি দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩০৬টি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটলেও গত বছর এটি কমে দাঁড়িয়েছে ২৮১টিতে।
এর আগে জানুয়ারি ২০১৭ থেকে জানুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৩৮টি গ্যাস স্থাপনা অনুসন্ধান করে তিতাস। এতে আবাসিক খাতে ৩৫ হাজার ১০১টি রাইজার, বাণিজ্যিক খাতে ১৫২টি, শিল্প খাতে ৫টি গ্যাসের সংযোগকেন্দ্রে লিকেজ পাওয়া যায়। এগুলো মেরামত করে দুই কোটি ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে তিতাস।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বলছে, লিকেজ শনাক্ত করার কাজটি চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে অন্য বিতরণ কোম্পানিও করবে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, ঢাকার তিতাস ও সিলেটের জালালাবাদ কোম্পানি অতি পুরোনো পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস বিতরণ করছে। ১৯৬৮ সাল থেকে তিতাস, ১৯৭৭ সাল থেকে জালালাবাদ ও ১৯৮২ থেকে গ্যাস বিতরণ করছে কর্ণফুলী। এসব বিতরণ কোম্পানি আধুনিক করা হবে।
কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ৫০ শতাংশ লিকেজ শনাক্ত করে সংস্কার করা হয়েছে। এতে ৪০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় হয়েছে। সামনে আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হবে লিকেজ শনাক্তে।
জ্বালানি সাশ্রয়ী কাজে গতি কম
আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হবে বিশ্ব জ্বালানি সক্ষমতা দিবস। জ্বালানি সাশ্রয়, সংরক্ষণ ও জ্বালানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে ২০১৬ সালে একটি মহাপরিকল্পনা নেয় সরকার। এতে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ ও ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এটি সফল করতে সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক তহবিল গঠন করে স্বল্প সুদে ব্যবসায়ীদের ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া শিল্পে গ্যাস–সংযোগ নিতে হলে কারখানায় জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হয়। গত বছর পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয়ে মাত্র ৩ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।
গ্রাহকের বাড়তি বিলে চাপা পড়ছে অপচয়
বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে, গৃহস্থালি রান্নায় ব্যবহৃত দুই চুলার একজন গ্রাহক মাসে গড়ে কোনোভাবেই ৫০ ঘনমিটারের বেশি গ্যাস ব্যবহার করেন না। অথচ ৭৮ ঘনমিটার ধরে দুই চুলার বিল হিসাব করা হয়েছে ৯৭৫ টাকা। তার মানে প্রতি চুলায় একজন গ্রাহকের কাছ থেকে ২৮ ঘনমিটার গ্যাসের দাম বাড়তি নেয় বিতরণ কোম্পানি। প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী একজন গ্রাহক ৪০ থেকে ৪৫ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন। তাঁদের মাসে বিল দিতে হয় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। মিটার ছাড়া একজন গ্রাহক মাসে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি বিল দিচ্ছেন বিতরণ কোম্পানিকে। শুধু তিতাসের আবাসিক গ্রাহক আছেন সাড়ে ২৮ লাখ। এর মধ্যে সাড়ে ২৫ লাখের বেশি গ্রাহকের প্রিপেইড মিটার নেই। এর ফলে এসব গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ১১৫ কোটি টাকা বাড়তি নিচ্ছে তিতাস। এতে ১১৫ কোটি টাকার গ্যাস অপচয় হিসাবে খাতায় চাপা পড়ে যাচ্ছে। সারা দেশে গ্যাসের মোট গ্রাহক ৪৩ লাখ, এঁদের মধ্যে প্রিপেইড মিটার আছে মাত্র সাড়ে ৩ লাখ।
চাপ কম থাকায় নির্ধারিত গ্যাস না পাওয়ার নিয়মিত অভিযোগ করেন শিল্পমালিকেরা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) নেতারা বলছেন, ইলেকট্রনিক ভলিউম ক্যারেক্টার (ইভিসি) মিটার বসালে শিল্পে গ্যাস বিল কমে আসবে। তাই বিতরণ কোম্পানি ইভিসি মিটার দিচ্ছে না। ইভিসি দিলে তাদের কারিগরি অপচয় চাপা দেওয়ার আর সুযোগ থাকবে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম. তামিম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃত অর্থে অপচয় আরও অনেক বেশি। বৈধ গ্রাহকেরা বাড়তি বিল দেওয়ায় অপচয় কম দেখা যাচ্ছে। চুরি ছাড়া গ্যাস অপচয়ের তেমন সুযোগ নেই। অবৈধ গ্রাহকদের মাধ্যমে এটি হচ্ছে। অপচয়ের বড় অংশ আসে চুরি থেকে, আর বাকিটা লিকেজ থেকে। চুরি বন্ধ করে হাজার হাজার কোটি টাকার গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব।