দোতলার গ্রিল কেটে বাসায় ঢোকে ছয়-সাতজন, তারপর...

বাদল চৌকিদার।
ছবি: সংগৃহীত

রাত তখন প্রায় আড়াইটা। বাসার সবাই ঘুমে। এমন সময় দোতলার গ্রিল কেটে বাসায় ঢোকে ছয়–সাতজন। প্রথমে বৃদ্ধ মা–বাবার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে আলমারির চাবি কেড়ে নেয় তারা। সেখানে ছিল ৬ ভরি সোনা আর ৫০ হাজার টাকা। সেসব নেওয়ার পর ডাকাতেরা বৃদ্ধ বাবাকে বাধ্য করে ছেলের দরজায় নক করতে। অস্ত্রের মুখে বৃদ্ধ বাবা ছেলেকে বলেন, তিনি অসুস্থবোধ করছেন। ছেলে দরজা খুললে তাঁর হাত–পা বেঁধে ফেলে ডাকাতেরা। এরপর পুরো পরিবারকে জিম্মি করে মোট ২৯ ভরি সোনা আর ৭ লাখ টাকা ছিনিয়ে সটকে পড়ে তারা।

রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুল এলাকার হুমায়ূন কবির নামের এক ব্যবসায়ীর বাসায় গত ১০ নভেম্বর এ ঘটনা। ওই ঘটনায় করা মামলার এজাহার ও তদন্তের পর আদালতে জমা দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনে সেদিন রাতের ওই ঘটনার এমনই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

বাড্ডা থানার পুলিশ বলেছে, হুমায়ুন কবিরের বাসায় সেদিন যাঁরা ডাকাতি করেছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে পুলিশ চিহ্নিত করেছে। তাঁদের ছয়জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

এর মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা হলেন রুবেল ওরফে নাটা রুবেল, জাফর সিকদার ও মো. রুবেল। তাঁদের জবানবন্দিতে ডাকাত দলের সরদার হিসেবে নাম উঠে আসে বাদল চৌকিদারের (৩৩)। ১১ ডিসেম্বর বাড্ডা থেকে গ্রেপ্তার হন বাদল। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তাঁর ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ডাকাতির অভিযোগে গ্রেপ্তার প্রত্যেক আসামির বাড়ি বরগুনা জেলায়। বাদলের বাড়ি বরগুনার জাকির তবক গ্রামে। বাড্ডার বাসায় ডাকাতির নেতৃত্ব দেন বাদল নিজে। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরগুনা ও মুন্সিগঞ্জে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে ১৫টি মামলার হদিস পাওয়া গেছে।

বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, বাদল চৌকিদার অনেক বছর ধরেই ডাকাতি করে আসছেন। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় বাসায় বাসায় নিয়মিত ডাকাতি করত তাঁর নেতৃত্বাধীন ডাকাত দল।

বাড্ডার ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাসায় যাঁরা ডাকাতি করেছিলেন, তাঁরা দুর্ধর্ষ ডাকাত। তাঁদের প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।
বাদল ডাকাতের নামে ১৫ মামলা

মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, বাড্ডার ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবিরের বাসায় ডাকাতির সময় ডাকাত দলের সদস্যরা একজনকে ‘মাস্টার’ নামে অভিহিত করেছিলেন। নিজেরা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট দুজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হুমায়ুন কবিরের বাসায় ডাকাতি করার ১৩ দিনের মাথায় ওই ডাকাত দলের সদস্যরা বাড্ডার বেরাইদ এলাকায় ডাকাতি করতে যান। তবে বাসার লোকজন টের পেয়ে যাওয়ায় সেদিন তাঁরা ডাকাতি করতে পারেননি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বাদল ডাকাতের সহযোগী তিনজনকে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ৪ ডিসেম্বর। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত দলের সরদার বাদল চৌকিদারের নাম জানা যায়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বাড্ডা এলাকা থেকে ১১ ডিসেম্বর তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, বাদল চৌকিদারের বিরুদ্ধে ২০০৯ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলাসহ দুটি মামলা হয়। রাজধানীর ভাটারা থানায়ও ২০১৩ সালে বাদলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। এর আগে ২০১২ সালে ঢাকার দক্ষিণখান থানায় বাদলের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগে দুটি মামলা হয়। এ ছাড়া বরগুনা সদর থানায় বাদলের বিরুদ্ধে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। এ ছাড়া বাদলের সহযোগী রুবেলের বিরুদ্ধে বরগুনায় অস্ত্রসহ তিনটি মামলা রয়েছে।
বাড্ডা থানার পরিদর্শক মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, বাদল চৌকিদার ও তাঁর সহযোগীরা সাধারণত বাসায় ডাকাতি করে থাকেন। এরপর লুণ্ঠিত মালামাল ভাগ করে নেন। জিজ্ঞাসাবাদে অনেক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বাদল চৌকিদার।