‘ধর্মের নামে রাজনীতি বন্ধ না করা গেলে দেশ এগোতে পারবে না’
ধর্মের নামে রাজনীতি বন্ধ না করা গেলে দেশ কিছুতেই সামনের দিকে এগোতে পারবে না। তিন দশকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভের মাধ্যমে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হলেও দেশে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৩০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে গত বুধবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে এক ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ, প্রজন্ম ’৭১-র সভাপতি আসিফ মুনীর তন্ময়, সর্ব ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনসার আহমদ উল্লাহ, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা লীনা পারভিন, নির্মূল কমিটির নিউইয়র্ক শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া প্রমুখ।
এই সম্মেলনে আলোচ্য বিষয় ছিল ‘জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘নির্মূল কমিটির আন্দোলনের শুরু থেকেই চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছু আমাদের দেখিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য নির্মূল কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা জঙ্গিবাদের বিষদাঁতগুলো ভেঙে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। কিন্তু সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পারিনি।’
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সহযোগিতা আমাদের জঙ্গিবাদ নির্মূলে সফলতা এনে দিয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে নির্মূল কমিটি জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার ঘটনাগুলো জনগণের সামনে নিয়ে আসে, যা সরকারকে সহযোগিতা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি জঙ্গি মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ ও জাতিগঠনের অঙ্গীকার নিয়ে আমাদের আন্দোলন যাত্রা শুরু আজ থেকে ৩০ বছর আগে। তিন দশকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভের মাধ্যমে আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হলেও দেশ থেকে আমরা মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার উত্থান কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এক দেশে এর বিস্তার ঘটলে অন্য দেশেও তার অভিঘাত ঘটে। যে কারণে আমরা দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিক আন্দোলনসমূহের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি।’
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, মৌলবাদীরা রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার অনুপ্রবেশ ঘটানো থেকে শুরু করে শিক্ষামাধ্যমেও ব্যাপকভাবে সাম্প্রদায়িকতাকরণ করে যার ফলে দেশে ব্যাপকভাবে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘ধর্মের নামে রাজনীতি বন্ধ না করা গেলে দেশ কিছুতেই সামনের দিকে এগোতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৭২-এর সংবিধানের মাধ্যমে আমরা যে চেতনাকে নিয়ে এগিয়েছিলাম তা যদি অব্যাহত থাকত তবে বাংলাদেশ এত দিনে সারা বিশ্বের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থিত হতো।’
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনের দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয় বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় মিরপুরে শহীদজননী জাহানারা ইমামের সমাধিতে শ্রদ্ধা অর্পণের মাধ্যমে।