নিম্ন আয়ের মানুষ ঈদের আগে পাচ্ছে না ‘ফ্যামিলি কার্ড’

প্রতীকী ছবি

তালিকা করতে না পারায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষকে এখনো সুলভ মূল্যে পণ্য কেনার ‘ফ্যামিলি কার্ড’ দেওয়া সম্ভব হয়নি। সাধারণ মানুষ আশা করেছিল, তারা রোজায় ফ্যামিলি কার্ড দিয়ে পণ্য কিনতে পারবে। সেটা সম্ভব হয়নি। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে কার্ড দেওয়ার সুযোগও নেই।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গত ২০ মার্চ সারা দেশের এক কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়ার কাজ শুরু হয়। শুরুতেই ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের নিম্ন আয়ের মানুষকে এর আওতায় রাখা হয়নি। সেখানেও কারণ ছিল তালিকার অভাব।

অবশ্য ৪ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক পরিপত্র জারি করে জানায়, এই তিন সিটিতেও ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি হবে। এ জন্য ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তালিকা করে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগকে পাঠাতে হবে। আর কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু হবে আগামী ১৫ মে, অর্থাৎ ঈদের পরে।

আরও পড়ুন

তিন সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা তালিকা তৈরির কাজ করছে। তবে নির্ধারিত সময়ে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, তালিকা প্রণয়নের যে সময়সূচি দেওয়া হয়েছে, তাতে এটা দৃশ্যমান যে ঈদের আগে এই সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে তালিকা তৈরি ও কার্ড বিতরণের বিষয়টি শতভাগ স্বচ্ছ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা বলছেন, শুরুতেই উদ্যোগ নিলে তিন সিটির নিম্ন আয়ের মানুষ আগেই ফ্যামিলি কার্ড পেতেন। রোজা ও ঈদে তাঁরা কম দামে নিত্যপণ্য কিনতে পারতেন।

ফ্যামিলি কার্ড দেখিয়ে একটি পরিবার দুই দফায় প্রতিবার ১১০ টাকা দরে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি চিনি ও ৬৫ টাকা দরে ২ কেজি মসুর ডাল (মোটা দানা) কিনতে পারেন। অর্থাৎ এই তিনটি পণ্য কিনতে এক দফায় একজন ক্রেতার লাগে ৪৬০ টাকা। বাজার থেকে সমপরিমাণ পণ্য কিনতে প্রায় আড়াই শ টাকা বেশি লাগে।

যেমন বাজারে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের নির্ধারিত দাম ১৬০ টাকা। যদিও বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। এই তেল টিসিবির কাছ থেকে কেনা যায় ১১০ টাকা দরে।

ঈদের আগে এই কার্ড পেলে উপকার হতো। কারণ, ঈদেই মানুষের বেশি প্রয়োজন।
সোলায়মান মিয়া, রাজধানীর তুরাগের হরিরামপুর এলাকার বাসিন্দা

নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশেই ফ্যামিলি কার্ড নিতে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। এমনকি প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে অনেক সচ্ছল পরিবারও ফ্যামিলি কার্ড নিয়েছে। ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া না হলেও টিসিবি কম দামে নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম চালিয়েছে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অনেকে প্রায় প্রতিদিনই লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে পেরেছেন। অনেকে কোথায় বিক্রি হয়, সেটা আগে জানতে না পারা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে না পারার কারণে পণ্য কিনতে পারেননি। ফলে সরকারের ভর্তুকি মূল্যের পণ্যের সুফল অনেক নিম্ন আয়ের পরিবার পায়নি।

ঢাকায়ও ফ্যামিলি কার্ড দেওয়ার দাবিতে গত ২৫ মার্চ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পূর্ব জুরাইন এলাকায় ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এর বাইরে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সংগঠনের মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ-সমাবেশেও বস্তিবাসীকে কার্ড দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

আরও পড়ুন

তিন সিটিতে ১৪ লাখ কার্ড

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে ঢাকা উত্তর সিটিতে ৬ লাখ, দক্ষিণ সিটিতে ৭ লাখ এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৯০ হাজার পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়ার কথা জানানো হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের প্রথম আলোকে জানান, কাদের এই কার্ড দেওয়া হবে, সেই তালিকা তৈরির জন্য ১২ এপ্রিল ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। ৩০ এপ্রিলের (আজ শনিবার) মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করে জমা দেওয়ার কথা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছে। এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনে তালিকার অভাবে নিম্ন আয়ের মানুষ করোনাকালে সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তা পাননি। এবারও এখন পর্যন্ত ফ্যামিলি কার্ড পাননি দরিদ্র ব্যক্তিরা।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, তালিকা তৈরির কিছু কাজ এখনো বাকি আছে, যা ঈদের পর এক সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে।

‘ঈদেই বেশি প্রয়োজন’

নিম্ন আয়ের মানুষেরা বলছেন, রোজায় বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেশি ছিল। ঈদের আগে আরও বেড়েছে। রোজা ও ঈদেই কার্ড বেশি প্রয়োজন ছিল।

রাজধানীর তুরাগের হরিরামপুর এলাকার বাসিন্দা সোলায়মান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের আগে এই কার্ড পেলে উপকার হতো। কারণ, ঈদেই মানুষের বেশি প্রয়োজন।