নীলক্ষেতে পুড়ে যাওয়া দোকানের ঝাঁপ খুলছে

বিপ্লব বুক স্টোরের মালিক নজরুল ইসলাম। ধার করে আনা বই দিয়ে আবার নতুন করে ব্যবসা শুরুর চেষ্টা করছেন
ছবি: প্রথম আলো

নীলক্ষেতের বই বিক্রেতা নজরুল ইসলাম। দিন দশেক আগে লাগা আগুনে নিজের দোকানটি হারিয়েছেন তিনি। পুড়ে যাওয়া দোকানের উল্টো পাশের গলিতে একটি শেলফ রেখে তাঁকে সেখানে বই রাখতে দেখা যায়। প্রশ্নের জবাবে একগাল হেসে বলেন, আজ শনিবার দু-চারটে বইও বিক্রি হয়ে গেছে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি নীলক্ষেতের হযরত শাহজালাল বহুমুখী সমবায় সমিতির ২৭টি দোকান আগুনে পুড়ে যায়। ১০ দিন পর আজ অল্প কয়েকটি দোকান ঝাঁপ খুলেছে। পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোতে নতুন করা রঙের গন্ধ। সেখানে বইও রয়েছে হাতেগোনা।

নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সে রাতে লাগা আগুনে তাঁর বই ও দোকানের লাখ দশেক টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি নিজেও অসুস্থ। কিডনি কাজ করছে না।

আশপাশের দোকান থেকে বই ধার করে এনেছেন। যে বইগুলো বিক্রি হবে না, সেগুলো মূল মালিকদের কাছে রাতেই ফিরিয়ে দেবেন, এই শর্তে কিছু বই পেয়েছেন।
আপাতত এভাবেই দোকান চালাবেন বলে জানান নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাক যেন ভরা লাগে, সে জন্য ভিজে যাওয়া বইও রেখেছেন সেখানে। সেগুলো আছে তাকের ওপরের দিকে।

আগুনে পোড়া দোকান নতুন করে রং করা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

পুড়ে যাওয়া নিউ বুক গার্ডেনের সাদ্দাম হোসেন ও তপন বুক স্টোরের তরিকুল ইসলামও শনিবার দোকান খুলেছেন। টুকটাক বিক্রিও হয়েছে তাঁদের। তবে যে চৌধুরী ফ্রেন্ডস বুক সেন্টার থেকে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাদের অবস্থা সঙিন। বাজারে এ দোকানই সবচেয়ে বড়। এখন শুধু দোকানটির পুড়ে যাওয়া কাঠামোটুকু আছে। শনিবার দোকানে ঝালাইয়ের কাজ চলছিল। এর মধ্যেই গোটা বিশেক বই হাতে তোড়জোড় করতে দেখা যায় একজন দোকানিকে।

আরও পড়ুন

এখনো ঝুঁকি আছে

নীলক্ষেতে পুড়ে যাওয়া বইয়ের দোকানের কয়েকটির ঝাঁপ খুললেও, আবার আগুন লাগার ঝুঁকি আছে বলে সতর্ক করেছে ফায়ার সার্ভিস। তাদের ভাষ্য, যেকোনো সময় নীলক্ষেতের বইয়ের বাজারে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, দুটি কারণে এই বাজার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রথমত, কাগজ ‘সহজ দাহ্য’ পদার্থ। এখানে অপরিকল্পিতভাবে বই স্তূপ করে রাখা হয়। দ্বিতীয়ত, বইয়ের বাজারের ভেতর ইচ্ছেমতো বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া হয়েছে। ঘিঞ্জি এ জায়গায় দীর্ঘ সময় বাল্ব জ্বালিয়ে রাখা হয়। এ থেকে উত্তাপে আগুন ধরে যেতে পারে।

চৌধুরী ফ্রেন্ডস বুক সেন্টার থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি আগুন লাগে। এখন চলছে মেরামতের কাজ
ছবি: প্রথম আলো

নীলক্ষেতে বছর কয়েক আগেও একবার আগুন লেগেছিল উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ছোটখাটো আগুন প্রায়ই লাগে। আগেও তাঁরা বাজার পরিদর্শন করেছেন। ব্যবসায়ীদের মহড়ায় ডেকেছেন। কেউ শোনেননি। পরে তাঁরা নিজ উদ্যোগে দোকানিদের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র চালানো শিখিয়েছেন।

২২ ফেব্রুয়ারির আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত নয় ফায়ার সার্ভিস। কর্মকর্তারা বলছেন, ওই ঘটনায় এখনো তদন্ত চলছে।

আরও পড়ুন

দোকান সরানোর কথা ছিল আগেই

হযরত শাহজালাল বহুমুখী সমবায় সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নীলক্ষেতে এখনো আগুন লাগার ঝুঁকি থাকার বিষয়টি তাঁরাও মানছেন। গত বছরের ৩০ জুন রাজউক থেকে এই বাজারের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৩ শতাংশ ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র পান তাঁরা। এখানে ছয়তলা বাজার নির্মাণের ব্যাপারেও একমত হয়েছেন। আরও আগেই দোকানপাট সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে দেরি হয়।

নীলক্ষেতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দ্বিতল ঘর। ঘরটি দোকানের কর্মচারীদের থাকার জায়গাসহ বইয়ের গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হয়
ছবি: প্রথম আলো

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীলক্ষেতের প্রায় ১৬ একর জায়গায় ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। এখানে বাজারের সংখ্যা সাত। সম্প্রতি আদর্শ বিতান নামের একটি বাজার ভেঙে সরকারি স্থাপনা গড়ে তোলা হয়। এর বাইরে রয়েছে গাউছুল আজম সুপার মার্কেট, ইসলামিয়া বণিক বহুমুখী সমবায় সমিতি, বাকুশা হকার্স মার্কেট, বাবুপুরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হযরত শাহজালাল বহুমুখী সমবায় সমিতি, জিলানী সুপার মার্কেট ও বাণিজ্য বিতান।

আরও পড়ুন