পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন চান জাফরুল্লাহ চৌধুরী
দেশের স্কুল-কলেজ পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তকগুলোতে একটু পরিবর্তন চান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আজকে পাঠ্যপুস্তকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে পড়ানো হয় না, হাজী মুহম্মদ মুহসীনকে পড়ানো হয় না। পাঠ্যপুস্তকে কোনো হিন্দু-মুসলমান থাকবে না, থাকবে সত্য কথা-কাহিনি।’
রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ বুধবার সকালে এক সমাবেশে অংশ নিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে ‘নৈতিক সমাজ’ নামের একটি সংগঠন এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমার আবেদন, বায়তুল মোকাররমে আপনি একটা সভা ডাকুন। সেখানে মসজিদের আলেম, মন্দিরের পুরোহিত, গির্জার ফাদার—সবাই থাকবেন। সবাইকে নিয়ে মসজিদের ভেতরে বসে রাসুল (সা.)–এর মতো আলাপ-আলোচনা করে বলতে হবে, হিন্দু আমরা জ্ঞাতি ভাই, তাঁর গায়ে হাত ওঠানো অনৈসলামিক কাজ। মাদ্রাসার দরজা সবার জন্য খুলে দিন, হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবাই যেন সেখানে পড়তে পারেন। প্রধানমন্ত্রী না নামলে সাম্প্রদায়িকতা বন্ধ হবে না।’
সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারটা সম্পূর্ণভাবে প্রশাসন ও সরকারের ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধে যে কথা বলেছিলাম, তা রক্ষা করতে পারিনি। আমাদের সমাজে আজকে নৈতিকতার প্রয়োজন বেশি। নৈতিক পন্থা অবলম্বন না করার কারণেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মতো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা আর ঘটতে দেওয়া যাবে না। চুরি-দুর্নীতি বন্ধ করতে নৈতিক সমাজ গঠন ছাড়া আর কোনো পথ নেই। নৈতিক সমাজ হলো মানবতার বিজয়। আমাদের একটা নৈতিক সমাজব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।’
প্রবীণ এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, ভারত থেকে সাবধান। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত যা দিয়েছে, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। তার চেয়ে অনেক বেশি আমরা দিয়েছি।’
সমাবেশে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিক অভিযোগ করেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক সংবিধান পরিবর্তন করে বৈষম্যমূলক করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা-ধর্মান্ধতা ও সন্ত্রাসবাদকে উসকে দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, এর পেছনে একটা গভীর ষড়যন্ত্র ছিল।’
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারি ও বিরোধী দল থাকবে, এমন অবস্থা তৈরি করার আহ্বান জানান নিম চন্দ্র ভৌমিক। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ভারতের সঙ্গে সমস্যা সমাধান করে আমাদের সুসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গেও সুসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। অগণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। কারণ, তারা অন্য শক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সব ধর্মের মানুষ মিলে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে নৈতিক সমাজের আহ্বায়ক এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত আ ম স আ আমিন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমান, বাংলা বিপ্লব নামের সংগঠনের সভাপতি সাকিব আলী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক বক্তব্য দেন।