অপরাধচিত্র
পুলিশের তথ্যেই খুন বেড়েছে ঢাকায়
ডিএমপির আওতাধীন ৫০টি থানায় হওয়া বিভিন্ন মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
■ জানুয়ারিতে ঢাকায় খুন হন নয়জন।
■ ফেব্রুয়ারিতে খুনের ঘটনা ১২টি।
পুলিশের তথ্যই বলছে, রাজধানী ঢাকায় খুন, চাঁদাবাজি, গাড়ি চুরি ও দস্যুতার মতো অপরাধ বেড়েছে। কমেনি ছিনতাইয়ের ঘটনাও। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আওতাধীন ৫০টি থানায় গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে হওয়া বিভিন্ন মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করে অপরাধের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
ডিএমপির তথ্য বলছে, এ বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীতে খুন হন নয়জন। ফেব্রুয়ারিতে খুনের ঘটনা ১২টি। এর মধ্যে পাঁচটি খুনের ঘটনাই মিরপুর এলাকায়। মার্চ মাস শেষ হতে এখনো ছয় দিন বাকি। গত ২৫ দিনে আলোচিত একাধিক খুনের ঘটনা রয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপুকে। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কলেজছাত্রী ছাত্রী সামিয়া আফনান।
পুলিশ বলছে, করোনার কারণে রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় চুরি ও দস্যুতা কম ছিল। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এখন আগের মতোই রাজধানী কর্মব্যস্ত। এ ছাড়া ঢাকায় মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়েছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে চুরি, ছিনতাই ও দস্যুতার মতো অপরাধে জড়াচ্ছে মাদকসেবীরা।
খুনের সঙ্গে ঢাকায় মোটরসাইকেলসহ গাড়ি চুরির ঘটনাও বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ রকম ৩৬টি ঘটনায় মামলা হয়েছে। এর আগে জানুয়ারি মাসে মোটরসাইকেল বা গাড়ি চুরির মামলা হয়েছিল ৩১টি। চাঁদাবাজির ঘটনায় গত দুই মাসে ঢাকায় মামলা হয়েছে ১৬টি। গত মাসে নয়টি ও জানুয়ারি মাসে সাতটি। তবে অনেকে হয়রানি এড়াতে এবং চাঁদাবাজদের হুমকির কারণে মামলা করতে চান না।
রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গত জানুয়ারি মাসে পাঁচটি ও ফেব্রুয়ারিতে আরও পাঁচটি মামলা হয়েছে। তবে ডিএমপির এ মামলার তথ্যে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। কারণ, ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা থানায় গিয়ে মামলা করেন না।
চলতি মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মৌচাকের অফিস থেকে মেরুল বাড্ডার বাসায় ফিরছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী খন্দকার পলাশ। রিকশায় করে বাসায় ফেরার পথে রাত আটটার দিকে রামপুরা বাজার এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন তিনি। খন্দকার পলাশ প্রথম আলোকে বলেন, ফোনে কথা বলছিলেন। হঠাৎ পেছন থেকে এক যুবক দৌড়ে এসে তাঁর ফোনটি কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যান। পুলিশের কাছে গেলে ঝামেলা হতে পারে। আবার ফোন উদ্ধার হবে কি না, সে নিশ্চয়তাও নেই। তাই থানায় গিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি তিনি।
পুলিশ বলছে, করোনার কারণে রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় চুরি ও দস্যুতা কম ছিল। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এখন আগের মতোই রাজধানী কর্মব্যস্ত। এ ছাড়া ঢাকায় মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়েছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে চুরি, ছিনতাই ও দস্যুতার মতো অপরাধে জড়াচ্ছে মাদকসেবীরা।
অন্যদিকে খুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ কী, তা নিয়ে পুলিশের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা মনে করেন, সামাজিক অবক্ষয় ও নানামুখী চাপে মানুষ এখন অল্পতেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে থানাগুলোতে টহল জোরদার করা ও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসের অপরাধ পর্যালোচনা নিয়ে গত রোববার ডিএমপি সভা করেছে। সভায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে থানাভিত্তিক অপরাধীদের তালিকা তৈরি করে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।