পুলিশের সাত সদস্যের অবহেলায় নিরপরাধ আরমানের কারাভোগ: পিবিআই

রাজধানীর পল্লবী থানার মাদকের এক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন বিহারির পরিবর্তে বেনারশি পল্লির কারিগর মো. আরমান প্রায় পাঁচ বছর কারাভোগ করেন। এ ঘটনায় সাত পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্বে চরম অবহেলা পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ সোমবার প্রতিবেদনটি দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

সাত পুলিশ সদস্য হলেন—পল্লবী থানার তৎকালীন ওসি মো. দাদন ফকির ও মো. নজরুল ইসলাম, তৎকালীন এসআই মো. রাসেল (বর্তমানে পরিদর্শক), ডিউটি অফিসার ও এসআই মনিয়ারা আক্তার (বর্তমানে পুলিশ পরিদর্শক), মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম, এএসআই ইমদাদুল হক (অবসরপ্রাপ্ত) ও এএসআই হযরত আলী। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে চার দফা সুপারিশ করেছে পিবিআই।

‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটি যুক্ত করে আরমানকে বেআইনিভাবে আটক রাখার বৈধতা নিয়ে তাঁর মা বানু ওই বছরই হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে কারাগারে থাকা আরমানকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ের পর গত ২১ জানুয়ারি আরমান মুক্তি পান।

হাইকোর্ট পল্লবী থানার সাবেক চার পুলিশ সদস্যকে চলতি দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে যুক্ত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন। চার কর্মকর্তা হলেন—পল্লবী থানার সাবেক ওসি মো. দাদন ফকির ও মো. নজরুল ইসলাম এবং সাবেক উপপরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম খান ও মো. রাসেল। রায়ে আরমানকে বেআইনি আটকের ঘটনায় দায় নিরূপণে নতুন করে অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তা নিযুক্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তিন মাসের মধ্যে তদন্ত করে পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শকে (ডিআইজি) আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষ আজ অনুসন্ধান প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে বলে জানান রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মো. হুমায়ন কবির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

পরে আইনজীবী মো. হুমায়ন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ঘটনায় দায় নিরূপণে পিবিআইয়ের তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি চার দফা সুপারিশ করেছে। সুপারিশে মামলায় আসামির নামের সঙ্গে পিতা-মাতা উভয়ের নাম সংযুক্ত, আসামি গ্রেপ্তারের পর তাঁর ছবি ধারণ করার কথা বলা রয়েছে। আসামির সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য অনুসন্ধান স্লিপের (ই/এস) সঙ্গে আসামির ছবি সংযুক্ত করে পাঠানো এবং অনুসন্ধান স্লিপ তদন্ত শেষে এসসিডির (ডকেট) সঙ্গে আসামির পরিচিতি-সংক্রান্ত এনআইডি বা পাসপোর্টের কপি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স বা জন্মনিবন্ধন সনদের কপি সংযুক্ত করার কথা বলেছে অনুসন্ধান কমিটি। প্রতিবেদনের ওপর মঙ্গলবার শুনানি হতে পারে।’