পুড়ে যাওয়া মরদেহ শনাক্তে ৩৭ জনের নমুনা সংগ্রহ

ডিএনএ পরীক্ষার জন্য স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ করছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গ।
ছবি: তানভীর আহম্মেদ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপের হাসেম ফুডস লিমিটেড কারখানার আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৭ জনের মরদেহ শনাক্ত করতে ৩৭ স্বজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিএনএ পরীক্ষক মো. মাসুদ রাব্বি প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মৃতদেহ শনাক্ত করতে সকাল থেকেই স্বজনেরা মর্গের সামনে ভিড় করছেন। একমাত্র সন্তান মো. হাসনাইনের মরদেহ শনাক্ত করতে ভোলার চরফ্যাশনের অ্যাওয়াজপুর গ্রাম থেকে এসেছেন বাবা ফজলুল হক। তিনি প্রথম আলোকে জানান, আগুন লাগার পর থেকে তাঁর ছেলে হাসনাইনের খোঁজ পাচ্ছেন না। হাসনাইনের মোবাইল ছিল না। তাঁদের এলাকার রাকিব নামের আরেক ছেলে হাসনাইনের সঙ্গে একই কারখানায় কাজ করতেন। রাকিবের ফোনে কল দিয়ে ছেলের সঙ্গে কথা বলতেন তিনি। আগুন লাগার পর থেকে রাকিবও নিখোঁজ।

বাবা ফজলুল হক আরও বলেন, যাঁর মাধ্যমে এ কারখানায় হাসনাইন ও রাকিব কাজ করতে এসেছিলেন, সেই কন্ট্রাক্টর মোতালেব তাঁদের জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর থেকে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জে খোঁজার পর তাঁদের পাওয়া যায়নি। এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে এসেছেন ছেলের খোঁজে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস লিমিটেড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই আগুনের ঘটনায় প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর গতকাল শুক্রবার ওই ভবনের চারতলা থেকে ২৬ নারীসহ ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করে। সব মিলিয়ে ৫২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুনে লাশ পুড়ে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আজ ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দিনমণি শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, ছয়তলার আগুন নেভানো হয়েছে। তবে ওই ফ্লোরের বিভিন্ন স্থানে ডাম্পিং হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের ১০ জনের একটি দল সেখানে ঢুকেছে। তারা ডাম্পিংয়ের আগুন নেভানোর পাশাপাশি আরও লাশ রয়েছে কি না, সেই তল্লাশি চালাচ্ছে। সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত তারা কোনো লাশের সন্ধান পায়নি। তিনি আরও বলেন, বিক্ষিপ্তভাবে ডাম্পিংয়ের ভেতর থেকে আগুন বের হচ্ছে। ভবনের উত্তর ও পশ্চিম পাশে এখনো ডাম্পিংয়ের আগুন রয়েছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, জায়গা না থাকায় ঢামেক মর্গ থেকে ১৫ জনের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে সংরক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মরদেহগুলো পাঠানো হয়।