পেশাজীবীদের নিষ্পেষিত করছে আমলাতন্ত্র

ওবায়দুল কাদের
ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় পেশাজীবীদের অনেকেই আমলাতন্ত্রের সমালোচনা করেন। তাঁরা দাবি করেন, আমলাতন্ত্র এখন পেশাজীবীদের নিষ্পেষিত করছে, শোষণ করছে। আমলাতন্ত্র থেকে রক্ষা করার দাবি জানান পেশাজীবীরা।

পেশাজীবীদের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, তাঁদের ক্ষোভের কথা তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) কাউন্সিল হলে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধি তাঁদের সমস্যা, সংকটের কথা তুলে ধরেন।

সভায় আইইবির সভাপতি মো. নূরুল হুদা অভিযোগ করেন, পেশাজীবীদের দূরে ঠেলে দিয়ে আমলাদের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ডিসিরাই যদি সব কাজ করেন, তাহলে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিক। আজকে প্রকৌশলীদের কাজ ডিসিদের দিয়ে করিয়ে ফেলে। পদ্মা সেতুতে কী সিমেন্ট, রড ও বালু লাগবে, তা পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক বলবেন, নাকি মুন্সিগঞ্জের ডিসি বলবেন?’

আইইবির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমলাতন্ত্র আজকে আমাদের নিষ্পেষিত করছে। শোষণ করছে। ডিসিরা আমাদের শাসন করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের মানববন্ধনে নামতে হয়েছে। তাই আজ প্রধান অতিথির (ওবায়দুল কাদের) কাছে আহ্বান জানাব, আমাদের আমলাতন্ত্র থেকে রক্ষা করবেন। যার যা পেশা, মন্ত্রণালয় তাদেরই হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন করা হয় পাঁচজন সদস্য ও একজন চেয়ারম্যান নিয়ে। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ছয়টি। এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৫২টি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৫টি। কিন্তু ওই সংখ্যা দিয়েই চলছে। মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনেক বিষয় শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেয়। সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই শিক্ষকদের কাজটি করবেন। কিন্তু আমরা আমলাতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দাবি করেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জামায়াত-বিএনপির অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, সরকার নতুন যে গণমাধ্যম আইন করছে, সেটার খসড়ায় সাংবাদিকদের আরও হেয় করা হয়েছে।

পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব কামরুল হাসান খানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মাকসুদ কামাল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুন নূর দুলালসহ বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধি কথা বলেন।

সবার শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেশাজীবীদের দূরে সরিয়ে দেননি। তিনি পেশাজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা এত জন বক্তৃতা করলেন, সবই নিজেদের কর্মক্ষেত্রের সমস্যাগুলো নিয়েই বললেন। কিন্তু আজকে জাতির যে চ্যালেঞ্জ, তা অতিক্রমে আপনাদের কী ভূমিকা, আপনাদের কী করা উচিত; সেখানে তো আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা হতে পারি না।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘পার্টি অফিসে দেখবেন খুব ভিড়। পার্টি অফিসে ভিড় না থাকলে ওটা পার্টি অফিসই না। কিন্তু যাঁরা আসেন কমবেশি চাকরি-পদোন্নতি-এসব বিষয় নিয়ে। আওয়ামী লীগ অফিসে এই তদবিরই বেশি। দলীয় ব্যাপারে লোক আসে খুব কম। দেখে-শুনে খুব লজ্জা পাই। খারাপ লাগে। সবকিছু কি পরিবর্তন হয়ে গেছে? শিকড় থেকে আমরা কি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি?’

ওবায়দুল কাদের জানান, এরপর অন্য পেশাজীবীদের সঙ্গেও এমন মতবিনিময় করবেন তিনি। সময় হলে প্রধানমন্ত্রীও পেশাজীবীদের সঙ্গে বসবেন।