‘সকাল থেইক্যা দুইবার পুলিশের দৌড়ানি খাইছি। কিন্তু কী করুম? বাঁচন তো লাগব। পুলিশ আইবো বুঝলে ছয় মাসের পোলারে কোলে লইয়্যা দৌড় দিই, আর পান–সিগারেটের দোকান লুকাই রাখি। পুলিশ গেলে গা আবার দোকান খুলি। লকডাউনে পুলিশের দৌড়ানি দেওয়া বাড়ছে।’
কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর তেজকুনিপাড়ার সুমি বেগম। রাস্তার পাশে একটি টুলের ওপর পান–সিগারেটের ট্রে বা ডালা রেখে তিনি ব্যবসা করেন। পাশেই একটি লম্বা চেয়ারে শুইয়ে রাখেন ঘুমন্ত ছয় মাসের তাকবীরকে। যখন তাকবীর জেগে থাকে, তখন কোলে নিয়েই চলে ব্যবসা।
আজ শনিবার সকালে কথা হয় সুমি বেগমের সঙ্গে। জানালেন, মা আর ছেলের রাস্তায় কেটে যায় সারা দিন। ঘরে ফিরতে ফিরতে রাত ১১টা বা তারও বেশি বেজে যায়।
সুমি খুলনার মেয়ে। বয়স কত জানতে চাইলে নিজেই প্রথমে বললেন ২৮ বা ৩০ বছর। তবে পরক্ষণে নিজেই সংশোধন করলেন—না আফা, বয়স এত হইবো না, আরও কম হইবো।
সুমির তিন বছর বয়সী আরেক ছেলেকে পাঁচ মাস ধরে খুলনায় রেখে এসেছেন। সুমির অসুস্থ মা সেই ছেলেকে দেখভাল করেন। তবে মাকে টাকা পাঠাতে না পারলে এ ছেলেকেও খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। সুমি জানালেন, এই ছেলে তাঁর আগের স্বামীর ঘরের। সেই স্বামী সন্তানসহ তাঁকে ফেলে গেছেন, তালাক দিয়েছেন। পরে তাকবীরের বাবার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। তবে তাকবীরের বাবাও দেড় বছর ধরে স্ত্রী–সন্তানের দেখভাল করেন না। সুমির ভাষায়—এই স্বামীও নেশাপানি করে, খোঁজখবর নেয় না।
সুমি বললেন, ‘করোনা, লকডাউন—সব মিইল্যা এখন আর ব্যবসা করনই যায় না। দিনে এক হাজার ট্যাহার পান সিগারেটও বেচন যায় না। কিন্তু মা–পোলার খরচ তো ম্যালা।’
সুমি যে ঘরে রাতে থাকেন, তার ভাড়া চার হাজার টাকা। দুই মাসের ঘরভাড়া দিতে পারেননি। ঘরের মালিক বলেছেন, আরেক মাসের ঘরভাড়া দিতে না পারলে ঘরে তালা লাগিয়ে দেবেন। নিজের খাবার যেমন হোক, ছেলের খাবারের পেছনে খরচ তো করতেই হয়। দুই বছর ধরে রাস্তার পাশে পান–সিগারেট বিক্রি করেন বলে ছেলের জন্মের পর থেকে সেভাবে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেননি সুমি। ছেলেকে বাজারের গুঁড়া দুধ কিনে খাওয়ান, সপ্তাহে এ খাতেই চলে যায় ৫০০ টাকা।
সুমি জানালেন, রাস্তার পাশে পান–সিগারেট বিক্রি করেন বলে প্রায় সময়ই পুলিশের ধাওয়া খেতে হয়। আশপাশের মানুষের নানান কথা তো আছেই। কিন্তু মা ও ছেলেকে বেঁচে থাকতে হলে পুলিশের দৌড়ানিসহ সবকিছুই হজম করতে হয়।