‘প্রতিবাদের স্লোগান মুখে ধর্ষকদের দাঁড়াও রুখে’

সারা দেশে অব্যাহত নারী ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থী, বামধারার ছাত্র সংগঠনের কর্মী ও শিক্ষার্থীরা। শাহবাগ, ঢাকা, ৮ অক্টোবর
ছবি: আহমেদ দীপ্ত

নোয়াখালীতে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনসহ সারা দেশে অব্যাহত নারী ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থী, বামধারার ছাত্র সংগঠনের কর্মী ও শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়া হয়। এতে করে দোষী ব্যক্তিরা বারবার এমন ঘটনা ঘটায়। ধর্ষক ও তাদের ধর্ষকদের পৃষ্ঠপোষকদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ লেখা ব্যানার নিয়ে শাহবাগে চতুর্থ দিনের মতো চলছে এই গণ-অবস্থান ও বিক্ষোভ। বামধারার ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ কয়েকটি বাম সংগঠনপন্থী ও শিক্ষার্থীরা এই গণ-অবস্থানে আছে। তাঁরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানান। কাল শুক্রবার বেলা তিনটায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

শাহবাগে ছন্দে ছন্দে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ করছেন। মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় ‘ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘ধর্ষক লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পদত্যাগ করতে হবে’, ‘প্রীতিলতার বাংলাদেশে, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘প্রতিবাদের স্লোগান মুখে, প্রতিবাদের আগুন মুখে, ধর্ষকদের দাঁড়াও রুখে’, ‘আমার মাটি আমার মা, ধর্ষকদের হবে না’, ‘যে রাষ্ট্র ধর্ষক পুষে, সে রাষ্ট্র ভেঙে দাও’, ‘ধর্ষকদের কারখানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ স্লোগানে বিক্ষোভ করছেন। তাঁরা গণ-অবস্থান থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানান।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ বলেন, নোয়াখালী, সিলেটসহ দেশে অব্যাহত যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, তা একেকটা একেকটার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এসব হচ্ছে। সরকার ইতিমধ্যেই নোয়াখালীতে নারী নির্যাতনের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি না, গ্রেপ্তার যথেষ্ট। দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি ধর্ষকদের পৃষ্ঠপোষকদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ করতে হবে।’

প্রতিবাদী অবস্থানে বিক্ষোভ ও স্লোগানের পাশাপাশি চলছে প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কন কর্মসূচি।

হাবিবুল্লাহ বাহারের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লুৎফুন নাহার এসেছেন গণ-অবস্থানে। তাঁর হাতে একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘নারীর কেন দুর্গতি, বিচার চাই দ্রুতগতি’। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের কোনো নিরাপত্তা নেই। বাসা থেকে বের হলে বাসায় নিরাপদে ফিরতে পারব কি না, তা জানি না। অথচ এমন অনিরাপদ বাংলাদেশে আমাদের প্রতিদিন বাঁচতে হচ্ছে। এর জন্য আমাদের আন্দোলন বজায় রাখতে হবে।’

এদিকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের সি ব্লকে শহীদ বাকি সড়কে মানববন্ধন করেছেন নারী শিক্ষকেরা ও একটি নারী সংগঠনের সদস্যরা। পল্লীমা মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আজ বেলা ১১টার দিকে এই মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে নারীরা বলছেন, দেশে অব্যাহত নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় তাঁরা আতঙ্কিত ও শঙ্কিত। এসব ঘটনার দ্রুত বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আতঙ্ক কাটবে না।

পল্লীমা মহিলা পরিষদের সভাপতি শিরীন বেগম বলেন, ‘নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা চলছে। এসব ঘটনা আর নেওয়া যাচ্ছে না। আমরা নারীরা ন্যায়বিচার চাই। এসব ঘটনার তিন মাসের মধ্যে বিচার করতে হবে এবং ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।’

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পল্লীমা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জনা রিফাত, শহীদ বাবুল একাডেমির অধ্যক্ষ মীরা রায়, পল্লীমা সংসদের সাধারণ সম্পাদক আওয়াল কামরুজ্জামান ফরিদ প্রমুখ।