এম এ ফয়েজ।
এম এ ফয়েজ।

শ্বাসকষ্ট ও কফ-কাশি হলেই যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে, সেটা ঠিক নয়। এ ধরনের সমস্যা বোধ করলে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের বাসায় একটি আলাদা কক্ষে চিকিৎসা নিতে পারে। চিকিৎসা বলতে তার যদি অন্য রোগ থাকে, সেগুলোর ওষুধ চলবে, আর জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশি করে পানি ও তরল খাবার খাওয়া দরকার। প্রয়োজন হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। তবে তাকে অবশ্যই যেকোনো একটি হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।

সরকারের পক্ষে একটা সময় হয়তো সব আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে রাখা সম্ভব না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তারা যাতে টেলিফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারি ওই চিকিৎসা পেতে পারে, সেই সুযোগ রাখতে হবে।

তবে কেউ যদি কয়েক দিন ধরে শ্বাসকষ্ট ও কাশি-কফের সমস্যায় ভোগে, তাকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আবার হাসপাতালগুলোতেও এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের জন্য আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা থাকা দরকার। একই সঙ্গে এসব রোগীকে কারা সেবা দেবেন (চিকিৎসক-নার্সসহ হাসপাতালের কর্মী), তা এখনই নির্দিষ্ট করে রাখা উচিত। কারণ, যাঁরা এসব রোগীর সেবা দেবেন, তাঁদের অন্য রোগীদের সেবা দেওয়া ঠিক হবে না। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিকিৎসক ছাড়াও হাসপাতালগুলোর অন্য কর্মীদের দ্রুত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

আর বাজারে যেভাবে মাস্ক ও হাত ধোয়ার তরল সাবান এবং জীবাণুমুক্ত করার সামগ্রী কেনার হিড়িক পড়েছে, সেটা আরেক আতঙ্ক তৈরি করছে। এসব সামগ্রী আর বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না বা অনেক দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে মাস্ক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী যাতে বিনা মূল্যে বা স্বল্প মূল্যে দেওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কারণ, যারা করোনায় সংক্রমিত হয়নি, তার চেয়ে যে সংক্রমিত হয়েছে, তার জন্য মাস্ক পরা বেশি জরুরি। কারণ, সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারে। আর একটি মাস্ক অনেকে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে, এটা ঠিক নয়।

সরকার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে সব রোগীর রক্ত পরীক্ষার যে ব্যবস্থা করেছে, সেটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত। কারণ, ঢাকার বাইরে জেলা পর্যায়েও অনেকে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। তাকে শুধু পরীক্ষা করার জন্য ঢাকার একটিমাত্র হাসপাতালে আসলে হলে তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে। সরকারের উচিত প্রতিটি হাসপাতালে এই রোগের জন্য রক্ত পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরি তা হচ্ছে, যাঁদের বয়স ৬৫-এর ওপরে, তাঁরা খুব জরুরি কাজ ছাড়া যাতে বাইরে না যান। কারণ, এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তাঁদের সবচেয়ে বেশি। অন্যদের ক্ষেত্রেও সাবধানে ও লোকসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। যেখানে-সেখানে কফ-থুতু ফেললে নিজের ও আশপাশের সবার জন্য করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হবে। এই বদভ্যাস অবশ্যই বদলাতে হবে।

অধ্যাপক এম এ ফয়েজ: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক