মন্দির-মণ্ডপে হামলা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত

রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তি রুখে দাঁড়াও’ শিরোনামের প্রতিবাদ সমাবেশ
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির-মণ্ডপসহ হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধ তথা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনার ওপর আঘাত করেছে একটি চক্র। এ চক্রটি দেশকে ধর্মান্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।

আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তি রুখে দাঁড়াও’ শিরোনামের এক প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়ে সাংবাদিক নেতারা এসব মন্তব্য করেন।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা–সহিংসতার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে অংশ নিয়ে সাংবাদিক নেতারা জানান, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার রক্তে, সবার লড়াইয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। যারা হামলার সঙ্গে জড়িত, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে সাংবাদিকেরা আছেন।

সমাবেশে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন জানান, এ দেশ যে ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, তাতে ধর্মের বিভেদ নেই। হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহৎ উৎসবে এ ধরনের হামলা মেনে নেওয়া যায় না। সবার মিলেমিশে থাকার জন্য এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু একটি চক্র নানান অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক হতে হবে।

বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল জানান, একটি চক্র এ দেশকে ধর্মান্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। কারা দাঙ্গা বাঁধিয়ে মানুষ মারার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে, তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব ওমর ফারুক বলেন, ঘটনাস্থলে থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হামলাকারীরা বহিরাগত। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি চক্র সক্রিয়। পূজামণ্ডপে হামলার সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ ছিল না কেন, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।

বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ জানান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মানুষকে আজ সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ জানান, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্টের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি নতুন খেলায় মেতেছে।

সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ। হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা দুর্বল নন, ভীত হবেন না। আমরা আপনাদের পাশে আছি।’

সমাবেশে সঞ্চালনা করেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান। তিনি জানান, এ দেশে যার যার ধর্ম ও কৃষ্টি পালন করার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার চর্চায় যারা বাধা দেবে, তাদের প্রতিহত করা হবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক জিহাদুর রহমান, ডিইউজের দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস ও ঢাকা সাব–এডিটরস কাউন্সিলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, বিএফইউজের সাবেক কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, জাতীয় প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী প্রমুখ।