‘মূল পরিকল্পনাকারী’ মুসা ওমানে আটক

জাহিদুল ইসলাম হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী সুমন সিকদার ওরফে মুসা।
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী সুমন সিকদার ওরফে মুসা ওমানে আটক হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী মহাপরিদর্শক মহিদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুসার বিষয়ে আমরা ওমান পুলিশের এনসিবি শাখার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছি।’

কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওমান পুলিশের সহায়তায় মুসাকে আটক করা হয়েছে। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

মুসা রাজধানী ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশ গ্রুপ ও মানিক গ্রুপের সদস্য। তিনি মতিঝিল এজিবি কলোনিতে যুবলীগ নেতা রিজভী হাসান ওরফে বোঁচা বাবু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। রিজভী হাসান হত্যা মামলার বাদী তাঁর বাবা আবুল কালাম।

এই আবুল কালাম আবার জাহিদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হিসিবে পরিচিত। রিজভী হত্যা মামলা মিটমাটের জন্য মুসাসহ আসামিরা জাহিদুলের কাছে গিয়ে ব্যর্থ হন। পুলিশ ও র‍্যাবের কর্মকর্তা বলছেন, অপরাধজগৎ ও দলীয় প্রতিপক্ষ জাহিদুলকে খুন করতে রিজভী হাসান হত্যা মামলার আসামিদের ব্যবহার করা হয়েছে।

দলীয় ও অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জেরে গত ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন জাহিদুল ইসলাম। সে সময় ঘটনাস্থলে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন ওরফে প্রীতিও (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, তিন থেকে চার মাস আগে জাহিদুল হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিকাশ-প্রকাশ গ্রুপের অন্যতম কিলার সুমন শিকদারের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করেন মতিঝিল ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। এর মধ্যে প্রথমে মুসাকে ৯ লাখ টাকা দেন ওমর ফারুক। মার্চের ১২ তারিখে টাকা নিয়ে দুবাই চলে যান মুসা।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দুবাই গিয়ে অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের আশ্রয়ে ছিলেন মুসা। সেখান থেকে মতিঝিল এলাকার অনেক ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের ফোন দিয়ে চাঁদা দাবি করেন তিনি। টাকা না দিলে জাহিদুল ইসলামের মতো পরিণতি হবে বলে তাঁদের হুমকিও দেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলেন, ইন্টারপোলের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পুলিশ দুবাই পুলিশের মাধ্যমে মুসাকে আটকের চেষ্টা শুরু করে। বিষয়টি টের পেয়ে দুবাই থেকে ওমানে চলে যান মুসা। এ খবর আসে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে। পরে ওমান পুলিশের মাধ্যমে তাঁকে শনাক্ত করে বাংলাদেশ পুলিশ। একই সময় পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুলিশকে পাঠিয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ওমানের পুলিশ মুসাকে আটক করে।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানান, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ওমান পুলিশকে পাঠানো হয়েছে। মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তদন্তসংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তা ও পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবির এক কর্মকর্তা শিগগিরই ওমানে যাবেন।

এদিকে জাহিদুল ইসলাম খুনের ঘটনায় পুলিশ ও র‍্যাব মিলে এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে গত ২ এপ্রিল ঢাকা থেকে খুনের পরিকল্পনায় যুক্ত মতিঝিল থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ২৭ মার্চ বগুড়া থেকে ‘শুটার’ মাসুম মোহাম্মদ গ্রেপ্তার হন। পরে মাসুম জাহিদুলকে গুলি করে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

এ খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১ এপ্রিল রাজধানীর দক্ষিণ কমলাপুর এলাকার রূপালী যুব উন্নয়ন সংস্থার (রূপালী ক্লাব নামে পরিচিত) কার্যালয় থেকে আরফান উল্লাহ ওরফে দামাল নামের ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তাঁর কাছ থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ডিবি সূত্র জানায়, আরফান রূপালী ক্লাবে বসে জাহিদুল হত্যার পরিকল্পনার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন।