রাস্তায়-এসটিএসে বর্জ্যের স্তূপ

করপোরেশনের যান্ত্রিক শাখার অধীনে রয়েছে ৩৩টি ডাম্প ট্রাক। শনিবার থেকে বর্জ্য সংগ্রহ বন্ধ রেখেছেন এই শাখার কর্মীরা।

রাস্তায় রাস্তায় বর্জ্যের স্তূপ। ময়লা-আবর্জনা রাখার সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনগুলোও (এসটিএস) ভরে গেছে। চালকেরা বর্জ্য সংগ্রহ করছেন না। এ কারণেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় বর্জ্যের স্তূপ জমে-পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, গত দুই দিন ধরে (শনি ও রোববার) যান্ত্রিক শাখার চালকেরা কাজ করছেন না। এতে যেসব এলাকা থেকে যান্ত্রিক শাখার ডাম্প ট্রাকে করে বর্জ্য সংগ্রহ করা হতো, সেসব এলাকায় এখন বর্জ্যের স্তূপ। করপোরেশনের কোনো কোনো চালক আবার লাইসেন্স নবায়ন নিয়েও ব্যস্ত।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে বর্জ্য নেওয়ার কাজ করে ১৬৮টি গাড়ি। এর মধ্যে পরিবহন শাখার আওতাধীন ১৩৫টি গাড়িতে বর্জ্য নেওয়ার কাজ হচ্ছে। এর মধ্যে কনটেইনার ক্যারিয়ার ৪৪টি, কমপেক্টর ৪৬টি ও খোলা ট্রাক আছে ৪৫টি। বাকি ৩৩টি ডাম্প ট্রাক যান্ত্রিক শাখার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যান্ত্রিক শাখার এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষ পাশে থাকে না, এ অজুহাতে চালকেরা গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন। গাড়ি চালানোর সময় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষ না নিলে তাঁরা গাড়ি চালাবেন না বলে ঠিক করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের বিপরীত পাশের সড়কে ডিএনসিসি বর্জ্য পরিবহনের একটি ডাম্প ট্রাকের ধাক্কায় মারা যান সংবাদকর্মী আহসান কবীর খান। ডাম্প ট্রাক পরী-৫১২৮ নম্বরের গাড়িটি মো. হানিফ ওরফে ফটিক চালাচ্ছিলেন। তবে কাগজে-কলমে ওই গাড়ি করপোরেশনের ‘শ্রমিক’ রুবেল ওরফে রেকার রুবেলের নামে বরাদ্দ।

সরজমিন: ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

গতকাল উত্তর সিটির আওতাধীন মিরপুর-১, ৬, ১১, ১২ নম্বর সেকশন ও কারওয়ান বাজার এলাকার এসটিএস ও সড়কে বর্জ্যের স্তূপ দেখা গেছে। এসটিএস ভরে যাওয়ায় রাস্তায় রাখা হচ্ছে বর্জ্য। ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

মিরপুর-১১ নম্বর সেকশন কাঁচাবাজার–সংলগ্ন এসটিএসে বর্জ্য সংগ্রহ করত পরী-৬ নম্বরের হিনো ডাম্প ট্রাক। মো. রিপন নামের একজন শ্রমিক এটি চালাতেন। দুই দিন ধরে ওই এসটিএস থেকে বর্জ্য নেওয়া হচ্ছে না বলে জানান এসটিএসের কর্মী রায়হান আহমেদ। গতকাল বিকেলে দেখা যায়, এসটিএসটিতে ময়লা-আবর্জনা ভরে গেছে। ভ্যান সার্ভিসের কর্মীরা বাসাবাড়ির বর্জ্য রাস্তায় ফেলে দিচ্ছেন। এতে সামনের রাস্তা অর্ধেক বন্ধ হয়ে গেছে।

রায়হান আহমেদ বলেন, গত শনিবার থেকে ময়লা নেওয়া হচ্ছে না। ওই রাতে একটি পে-লোডার এসে কিছু ময়লা এসটিএসের ভেতরের দিকে ঠেলে রেখে গেছে।

বর্জ্য পরিবহনের ১৬৮টি গাড়ির বিপরীতে চালক আছেন ৯৮ জন। এর মধ্যে পরিবহন শাখার স্থায়ী চালক ৬১ জন ও যান্ত্রিক শাখার স্থায়ী চালক ১৭ জন। এ ছাড়া দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োজিত (মাস্টাররোল) আরও ২০ জন চালক আছেন।

যান্ত্রিক শাখার একটি তালিকা অনুযায়ী ৩৩টি ডাম্প ট্রাক যাঁরা চালাতেন, তাঁদের মধ্যে করপোরেশনের চালক আছেন মাত্র ৭ জন। বাকিদের মধ্যে শ্রমিক ৮ জন, উচ্ছেদ শ্রমিক ৫ জন, স্কিন লেবার ২ জন এবং একজন করে মেশিন অপারেটর ও ফিটার। তালিকায় ৫ জন বহিরাগতের নাম আছে, যাঁরা ডাম্প ট্রাক চালাতেন। এ ছাড়া ৪টি ট্রাক কারও নামে বরাদ্দ ছিল না। ওগুলো চালকের সহকারী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী কিংবা বহিরাগতদের হাতে দেওয়া হতো।

গত বৃহস্পতিবার ডিএনসিসি বর্জ্য পরিবহনের একটি ডাম্প ট্রাকের ধাক্কায় সংবাদকর্মী আহসান কবীর খান নিহত হওয়ার পর থেকে মূলত যাঁরা বহিরাগত, তাঁদের হাতে গাড়ি দেওয়া বন্ধ আছে। যে কারণে গাড়ি নামানো যাচ্ছে না। অন্যদিক যে শ্রমিক, উচ্ছেদ শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ডাম্প ট্রাক চালাতেন, তাঁরাও এখন চালাচ্ছেন না। তাই বর্জ্য পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে।

মিরপুর চিড়িয়াখানা সড়কের রাইনখোলা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, এসটিএসের ভেতরে ও বাইরে বর্জ্যের স্তূপ। এ এসটিএসের কর্মী বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখানে কনটেইনার আছে ছয়টি। এ ছাড়া দুটি কমপেক্টরে বর্জ্য নেওয়া হয়। এরপরও ডাম্প ট্রাক দিয়ে তিন ট্রিপ ময়লা নেওয়া হতো। কিন্তু গত শনিবার থেকে তা বন্ধ।

এসটিএস ছাড়াও মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের লোহা ফ্যাক্টরি এলাকার সড়কে বর্জ্যের স্তূপ জমে থাকতে দেখা গেছে। সেখানেও তিন দিন ধরে ময়লা নেওয়া হচ্ছে না বলে জানান পাশের রিকশা মেরামতের মিস্ত্রি মো. মোশারফ।

মিরপুর ১ নম্বরের টোলারবাগ এলাকায়ও এসটিসের ভেতরে বর্জ্য ফেলার আর জায়গা না থাকায় বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য আনা ভ্যানগুলোকে রাস্তায় রেখে দেওয়া হয়েছে। কিছু দূর সামনেই মডেল একাডেমিসংলগ্ন দুটি জায়গায় সড়কে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ দেখা গেছে।

দুই ধরনের কথা

যান্ত্রিক শাখার গাড়িচালকদের বর্জ্য সংগ্রহ না করার বিষয়ে এ শাখার দুজন কর্মকর্তা দুই ধরনের কথা বলেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ভয় পেয়ে চালকেরা গাড়ি না চালানোতেই বর্জ্য পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গাড়ি ও চালকের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সবকিছু যাচাই করছে। এ কারণেই গাড়ি বন্ধ আছে। তবে সোমবার (গতকাল) রাত থেকে বর্জ্য সংগ্রহ বন্ধ থাকা এলাকাগুলোতে কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।