রেডিও ছাড়া কিছুই ‘বাজেনি’

উপনির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ১১ হাজার ৪৬৬ জন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী পেয়েছেন ১১ হাজার ১০৭ ভোট।

বুথে না গিয়ে পোলিং এজেন্টের সামনেই ব্যালটে সিল মারছেন একজন ভোটার। সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টার ভোটকেন্দ্রে। গতকাল দুপুরে
ছবি: হাসান রাজা

গলায় রেডিও প্রতীকের ব্যাচ ঝুলিয়ে কেন্দ্রের সামনে কেউ চেয়ার পেতে বসে আছেন, কেউবা জটলা করে গল্পে মেতেছেন। তাঁদের সংখ্যা শ দুয়েক। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী–সমর্থক। এ চিত্র গতকাল শনিবার দুপুর পৌনে ১২টায় পুরান ঢাকার সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টার ভোটকেন্দ্রের সামনের। সেখানে র‍্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদেরও পৃথক গাড়ি ছিল।

পরিচয় দিয়ে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশের একজন উপপরিদর্শক (এসআই) বললেন, ভোট শেষ হওয়ার আগে কোনো সাংবাদিকের কেন্দ্রে প্রবেশ নিষেধ। উচ্চপদস্থরা তাঁকে এ নির্দেশ দিয়েছেন। পরে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের পর অনুমতি পাওয়া যায়। ভেতরে প্রবেশের পর দেখা গেল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ভোটকেন্দ্রের ভেতর কেবল তাঁর প্রার্থীর এজেন্টরাই আছেন। বাকি তিন প্রার্থীর কারও এজেন্ট নেই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচন ছিল গতকাল। এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন মিজানুর রহমান। তিনি এ ওয়ার্ডের প্রয়াত কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আক্তার হোসেনের প্রতীক ছিল ‘ঘুড়ি’। এ ছাড়া আরও দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। তাঁরা হলেন মশিউর রহমান ও আসাদুর রহমান খান। এই দুজনও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে নির্বাচনের দিন স্বতন্ত্র এ দুই প্রার্থী এবং বিএনপির প্রার্থীর সমর্থকদের ভোটের মাঠে ও কেন্দ্রে দেখা যায়নি।

গত ১৬ এপ্রিল ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন মারা যান। নির্বাচিত হয়ে শপথ নিলেও দায়িত্ব পালন করতে পারেননি তিনি। এর কারণ, তাঁর মৃত্যুর এক মাস পর ১৬ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রসহ কাউন্সিলররা দায়িত্ব বুঝে নেন।

বিএনপি ও স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর দাবি, তাঁদের এজেন্টদের কেন্দ্রের ভেতর প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বাইরের লোকজন এনে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অন্য তিন প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, তাঁর কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি, মুঠোফোনেও কেউ কিছু জানাননি। ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২০ হাজার ৭৬২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৬৯১ জন, আর নারী ভোটার ১০ হাজার ৭১ জন। ওয়ার্ডের সাতটি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হয়। কোনো কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বাইরে আর কারও এজেন্ট ছিল না।

দুপুরে বিএনপির প্রার্থী আক্তার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছেন। এরপর তিনি গোপীবাগে একটি বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টারের পুরুষ ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সুমন কুমার সরকারের কাছে অন্য প্রার্থীদের এজেন্ট না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সকালে রেডিও প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টরা কেন্দ্রে এসেছেন। দুপুর নাগাদ অন্য প্রার্থীদের এজেন্টরা কেন্দ্রে আসেননি।

কমিউনিটি সেন্টারের মধ্যে পুরুষ কেন্দ্রে ৩ হাজার ৪৫ ভোটের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৮০০ ভোট পড়ার তথ্য জানান এই প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। কমিউনিটি সেন্টারের দোতলায় পূর্ব দিকে নারীদের ভোটকেন্দ্র ছিল। নারী ভোটকেন্দ্রেও গিয়ে দেখা যায় সেখানেও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সমর্থকেরা ছাড়া অন্য কেউ নেই। এ কেন্দ্রে দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩৭ জন ভোটারের মধ্যে ৪৩৮ জন ভোট দিয়েছেন।

এ কেন্দ্রের ভেতর ২০ মিনিট অবস্থান করে দেখা যায়, বুথ তৈরি করা হলেও এজেন্টদের কাছ থেকে ব্যালট নিয়ে সেখানেই সিল মেরে তা বাক্সে ফেলা হচ্ছে। রেডিও প্রতীকের সমর্থকেরা যখন ইচ্ছা তখনই কেন্দ্রে প্রবেশ করছেন।

রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, রেডিও প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রহমান ১১ হাজার ১০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ঘুড়ি প্রতীকের প্রার্থী আক্তার হোসেন পেয়েছেন ২২৩ ভোট, ব্যাডমিন্টন প্রতীকের প্রার্থী আসাদুর রহমান ৬২ ভোট এবং ঠেলাগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী মশিউর রহমান ৭৪ ভোট পেয়েছেন। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করে এই কর্মকর্তা জানান, উপনির্বাচনে ৫৫ দশমিক ৬২ শতাংশ ভোট পড়েছে।