সংস্কারকাজে দুর্ভোগ, শেষ হতে লাগবে বাড়তি সময়

২ মার্চ কাজ শেষের কথা থাকলেও দু-এক মাস বেশি লাগবে। মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডের সংস্কারকাজের জন্য দুর্ভোগে পড়েছেন চলাচলকারীরা। গত শুক্রবার বিকেলে তেজগাঁওয়ে
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

সড়কের মাঝবরাবর নির্মাণ করা হচ্ছে পয়োনিষ্কাশন নালা। দুই পাশে চলছে পানিনিষ্কাশন নালা ও ফুটপাত নির্মাণের কাজ। ঝুলন্ত তার (কেব্‌ল) মাটির নিচ দিয়ে সঞ্চলনের পথ (ডার্ক লাইন) তৈরির কাজও হচ্ছে। পুরো সড়ক আগে থেকেই ভাঙাচোরা ও ছোট-বড় গর্তে ভরা।

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকার এমন সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা ও সাধারণ যাত্রীদের। ওই এলাকার বিভিন্ন সড়কে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ‘ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পের’ কাজ করছে। কাজটি গত বছরের জুলাইয়ে শুরু হয়েছে। আগামী ২ মার্চ কাজ শেষের সময় নির্ধারিত থাকলেও আরও দু–এক মাস বেশি লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, তেজগাঁও শিল্প এলাকার বিভিন্ন সড়ক, নালা ও ফুটপাত সংস্কারের কাজ চার ভাগে হচ্ছে। এর মধ্যে আসিফ এন্টারপ্রাইজ দুটি অংশের এবং মাইশা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও এস এম কনস্ট্রাকশন করছে একটি করে অংশের কাজ। প্রায় ৭ কিলোমিটার অংশে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

মীর শওকত সড়কসহ পাশের ৩ ও ৪ নম্বর সড়কের ১ হাজার ৯২০ মিটারের কাজ করছে মাইশা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ বলছে, সামগ্রিকভাবে এ অংশে কাজের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির প্রকৌশলী (সাইট ইঞ্জিনিয়ার) মোফাজ্জল হোসেন দাবি করেন, ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

সংস্কারকাজে ধীরগতির বিষয়ে মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারিনি। কীভাবে কাজ করতে হবে, সেটিও আগে থেকে বলা হয়নি। করপোরেশন তাদের মতো কাজ করাচ্ছে।’ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত হলেও বাড়তি এক মাস লাগবে বলে জানান তিনি।

তেজগাঁওয়ের ভূমি রেজিস্ট্রি কার্যালয় থেকে আহ্‌ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে সড়ক ও জনপথের কার্যালয় পর্যন্ত এলাকায় প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কে সংস্কার ও উন্নয়নের কাজ করছে আসিফ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে এই অংশেও সড়ক বেহাল দেখা গেছে। অনেক জায়গায় মাত্র কিছুদিন আগে পানিনিষ্কাশনের নালা তৈরির জন্য মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে বলে শ্রমিকেরা জানান। এর পাশাপাশি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) কর্তৃপক্ষও তাদের কাজের জন্য সড়ক কাটছে। তাতে ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

এই রাস্তা দিয়ে বাড্ডা থেকে কারওয়ান বাজারে যান হাবিবুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাস্তায় এত ধুলা ওড়ে যে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ ছাড়া প্রচুর যানজট হয়।’

কাজের অগ্রগতি ৬৫ ভাগ হয়েছে জানিয়ে আসিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আবদুল হাই বলেন, এখন শুধু রাস্তা সমান করা ও পিচ ঢালাইয়ের কাজ বাকি। তবে ডিপিডিসি তাদের কাজ করছে। ওই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

রাস্তার দুই পাশে নির্মাণকাজ চলমান থাকায় গর্তে ভরা সড়কে নিয়মিত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনের সড়কে। এ অংশ সড়কের মাঝবরাবর নির্মিত পয়োনালার পাশ ঘেঁষেই আবার রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। এতে সড়কটিতে প্রচুর যানজট হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ বলেন, ডিপিডিসির কারণেই সংস্কারকাজ শেষ করতে দেরি হবে। ডিপিডিসি তাদের কাজের জন্য সড়ক খননের অনুমতি চেয়েছে। ৩০ জানুয়ারি তাঁদের এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ডিপিডিসির কাজের জন্য ৭৫ দিন সময় লাগবে। এ হিসাবে এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হবে।