সংস্কারাধীন পার্কে পশুর হাট বসিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা

অবৈধভাবে হাট বসিয়ে আদায় করা হচ্ছে হাসিল। ত্রিকোণ পার্ক, মোহাম্মদপুর, ঢাকা, ২০ জুলাই
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের উল্টো পাশে সংস্কারাধীন ত্রিকোণ নামের একটি পার্কে অবৈধভাবে পশুর হাট বসানো হয়েছে। হাটটি বসিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা। এই অবৈধ হাট পরিচালনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈমুল হাসান রাসেল। ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে কর্মরত ব্যক্তি ও হাট–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে ত্রিকোণ পার্কে গিয়ে দেখা যায়, পার্কের ভেতরে ও বাইরে রাস্তায় ছাগল বিক্রির জন্য দাঁড়িয়েছেন বিক্রেতারা। সংস্কারাধীন পার্কের ভেতরের ছাগল যাতে বাইরের রাস্তা থেকে দেখা যায়, সে জন্য পার্কের চারপাশে থাকা টিনের বেড়া সরিয়ে ফেলা হয়েছে। প্রবেশপথের এক পাশে চেয়ার–টেবিল বসিয়ে আদায় করা হচ্ছে হাসিল। এ ছাড়া পার্কের পাশে রাস্তায় হাট বসানোর কারণে সড়কে যানজট হচ্ছে। যানজট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্ট প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সোমবার সারা দিন, রাতে এবং আজ সকাল থেকে এখানে যানজট হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতারা হাট বসিয়েছেন। তাঁদের কিছু বললেও তাঁরা আমাদের কথার গুরুত্ব দেন না।’

হাটে হাসিল আদায়কারী আফজাল হোসেন বলেন, এলাকার নেতারা সবাই মিলে এই হাট বসিয়েছেন। এই নেতারা কারা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাঁরা যাঁরা আছেন, সবাই। কেউ একা এই হাট করছেন না। শতকরা ৫ ভাগ, অর্থাৎ প্রতি হাজারে ৫০ টাকা হাসিল নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান। অবৈধ এই হাটে রীতিমতো রসিদ কেটে হাসিল আদায় করছেন তিনি। রসিদে লেখা, টাউন হল ছাগল ও খাসির হাট-২০২১।

হাটের ভেতরে এক পাশে একটি টিনের বেড়া ও ছাউনির ঘর রয়েছে। পার্কের সংস্কারকাজের কর্মীদের থাকার জন্য তা বানানো হয়েছিল। ওই ঘরে হাটের কার্যালয় করা হয়েছে। ওই ঘরের ভেতরে বসে মনিটরে বাইরের পরিস্থিতি সিসিটিভি ফুটেজে পর্যবেক্ষণ করছিলেন ৩১ নম্বর ওয়ার্ড জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ।

শাহীন আহমেদ বলেন, নাঈমুল ভাই (মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি) বিশ্রাম নিতে বাসায় গেছেন। সভাপতি (নাঈমুল) শুধু একা না, এলাকার ছেলেপেলে সবাই মিলে হাটটি বসানো হয়েছে।

অবৈধ হাটে হাসিল আদায় করা হচ্ছে কীভাবে, জানতে চাইলে শাহীন আহমেদ বলেন, খুশি হয়ে যে যেমন দেন। কারও কাছে জোর করে নেওয়া হয় না।

এই হাট প্রসঙ্গে ৩১ ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে কর্মরত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতির নেতৃত্বে এই হাট বসানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের লিখিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যেখানেই অবৈধ হাট পাবেন, অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেবেন। টাউন হলের অবৈধ হাটের বিষয়টি তিনি অঞ্চল-৫–এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হবে বলেও জানান তিনি।