সদরঘাটের পূর্বাংশ সরাতে বললেন মেয়র তাপস

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা লালকুঠির সামনে সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসসহ অন্যরা
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রূপলাল হাউস ও লালকুঠিকে পর্যটন উপযোগী করার জন্য সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ওই অংশ সরিয়ে নিতে বলেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় লালকুঠি প্রাঙ্গণে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে চলমান একটি প্রকল্পের আওতায় লালকুঠি সংস্কারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর বাস্তব চিত্র দেখতেই সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সেখানে পরিদর্শনে যান মেয়র। এ সময় বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ ও ভুটান) মারসি মিয়াং টেমবন, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সভাপতি প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা নদী ঘেঁষে গড়ে উঠেছে আমাদের ঢাকা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা এই ঐতিহাসিক স্থাপনা থেকে এখন আর বুড়িগঙ্গা দেখতে পাই না। কারণ, সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি দখলদারির ছোবলে নদী আজ দখল হয়ে গেছে। তাই আমি বিআইডব্লিউটিএকে অনুরোধ করব, অতিসত্বর আপনারা লালকুঠি থেকে রূপলাল হাউস পর্যন্ত অংশ থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সরিয়ে ফেলুন। ঢাকার ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে টার্মিনালের এই অংশটি দ্রুত সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিন।’

মেয়র বলেন, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর মধ্যে লালকুঠি আর ঢাকা গেটই কেবল সিটি করপোরেশনের আওতাধীন। রূপলাল হাউসসহ যেসব স্থাপনা ঢাকার অস্তিত্ব সৃষ্টি করেছে এবং ঢাকাকে পরিচিতি দিয়েছে, সেগুলো করপোরেশনের আওতাধীন নয়। রূপলাল হাউস সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হলে, তা পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করা হবে।

এ সময় অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, রূপলাল হাউস অবৈধ দখলের কবলে রয়েছে। এখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। লালকুঠির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে দক্ষিণ সিটির গৃহীত উদ্যোগ প্রসঙ্গে মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমি দেখলাম, এটা (লালকুঠি) পরিবর্তন হচ্ছে, আমার মনটা ভরে গেল।’

ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ঐতিহ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে নিজেদের শহরে নিয়ে আসতে পারাটা যেমন মর্যাদার, তেমনি পর্যটক আকর্ষণের মাধ্যমে লাভবান হওয়াটা সম্মানেরও।

লালকুঠির মধ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কথা বলছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসসহ অন্যরা
ছবি: সংগৃহীত

হাতিরঝিল প্রতিষ্ঠায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘সে সময় ৭৮টি ইনজাঙ্কশন ছিল। আমরা তিন মাসের মধ্যে সেসব ইনজাঙ্কশন খারিজ করিয়ে হাতিরঝিল প্রতিষ্ঠা করেছি। তাই আমি বিশ্বাস করি, লালকুঠির সংস্কার উদ্যোগের মাধ্যমে যে কাজ মেয়র শুরু করেছেন, তিনি এরপর একে একে ঐতিহ্যবাহী সব স্থাপনা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ঢাকার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের টেকসই উন্নয়নবিষয়ক আঞ্চলিক (সাউথ এশিয়া) পরিচালক জন রুম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ফজলে রেজা, দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর সিতওয়াত নাঈম, প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামান, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন প্রমুখ।