‘জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শিশুদের রক্ষা করুন। দূষণ ও গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমান। সবুজ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়ান। সমস্যা সমাধানে আমাদের অংশ নিতে দিন। আমাদের কথা শুনুন। ’ বরিশালের ১৩ বছর বয়সী কাবা কাওশিন জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সাংসদদের সামনে শিশুদের পক্ষ থেকে এভাবেই তাদের দাবি তুলে ধরেছিল। এ সময় জোয়ার, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় সহনশীল তথা জলবায়ুবান্ধব স্কুলেরও দাবি জানায় তারা।
আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ৩০০ শিশু প্রতিনিধি নিয়ে ‘শিশুদের জলবায়ু ঘোষণাপত্র হস্তান্তর’ নামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব দাবি জানায় শিশুরা। এ সময় আরেক শিশু প্রতিনিধি মাহিব রেজা জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনে শিশুদের ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, সেসব বিষয়ে তারা নিজেদের মতামত তুলে ধরতে চায়।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), বাংলাদেশ প্রজন্ম সংসদ (বিজিপি) ও বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। জাতীয় সংসদের সহায়তায় দেশের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার শিশু প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি ছায়া সংসদের মাধ্যমে ইউনিসেফ গত বছরের ২০ নভেম্বর বিশ্ব পরিবেশ দিবসে অনলাইনে একটি শিশু জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন করে। ওই সম্মেলনে প্রতিনিধিত্বকারী শিশুরা ভবিষ্যতে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সাংসদদের কাছে উপস্থাপন করার জন্য ওই জলবায়ু ঘোষণাপত্র তৈরি করেছিল।
৩১ অক্টোবর থেকে আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে শিশুদের চাহিদা ও দাবি তুলে ধরতে নীতিনির্ধারকদের কাছে এ ঘোষণাপত্র হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এখানে ৩০০ শিশু প্রতিনিধির ঘোষণাপত্রটিকে মডেল ধরা যেতে পারে। শিশুরা এ পৃথিবীকে কীভাবে দেখতে চায়, কীভাবে তাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হবে, তা জানিয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের জন্য দায়ী নয়, অথচ বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, সরকার জলবায়ু পরিবর্তন ও শিশুদের ওপর এর প্রভাবের বিষয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বতর্মান প্রজন্ম তাদের দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন। তাদের পদক্ষেপে ভবিষ্যৎ বিশ্ব উপকৃত হবে।
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শিশুরা দায়ী নয়; অথচ তারা ভুক্তভোগী। বাল্যবিবাহ, শিশুপাচার ও শিশুশ্রম জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সর্ম্পকিত। শিশুদের জন্য বসবাসের উপযোগী পৃথিবী গড়তে ও তাদের সুরক্ষা দিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিশুর অধিকার–সম্পর্কিত সংসদীয় ককাসের সহসভাপতি সাংসদ আরমা দত্ত, শহীদুজ্জামান সরকার, তানভীর শাকিল, শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও সৈয়দা রুবিনা আক্তার।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিশুর অধিকার–সম্পর্কিত সংসদীয় ককাসের সভাপতি সাংসদ শামসুল হক। তিনি বলেন, সারা দেশের ৩০০ শিশু প্রতিনিধি ৩০০ সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সাংসদ ও অংশীদারদের সম্পৃক্ত করে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে এবং নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছে। এ অর্জনকে কাজে লাগাতে হবে।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করে ক্রিস্টিনা ঐশী মহন্ত নামের এক শিশু। উল্লেখ্য, শিশু ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রজন্ম সংসদ ২০১৮ সালে গঠিত হয়। এটি শিশু অধিকারবিষয়ক সংসদীয় ককাস এবং জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগ। ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৬ লাখ শিশুসদস্য এখন পর্যন্ত অনলাইনে এ উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছে।
২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনে বাংলাদেশ প্রজন্ম সংসদের প্রথম জাতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় নিজেদের দাবি, উদ্বেগ ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরতে ৩০০ শিশু জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচিত সাংসদের মুখোমুখি হয়।