করোনায় মারা যান উপসচিব জালাল সাইফুর রহমান
‘সাহ্রির মুহূর্তে বাবার কথা খুব মনে পড়ে’
২০২০ সালের ৬ এপ্রিল মারা যান উপসচিব জালাল সাইফুর রহমান। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনিই প্রথম করোনায় মারা যান।
‘বাবা তখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আর আমাদের বাসায় “লকডাউন”। বেরোনোর উপায় নেই। সেই সময় একদিন চিকিৎসাধীন বাবার হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তায় তাঁকে এত দিন না বলা কথাটি লিখি, সেটি হলো—“বাবা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।” কিন্তু কষ্টের বিষয় হলো, বাবা সেই বার্তাটি দেখতে পারেননি (সিন হয়নি। এটি মনে হলে খুব কষ্ট লাগে! আবার কখনো কখনো মনে হয়, না দেখে বোধ হয় ভালোই হয়েছে। কারণ, ওই অবস্থায় সেটি দেখে বাবা না জানি কী লিখতেন! সেটি হয়তো আরও কষ্টের কারণ হতো।’
কথাগুলো বলছিলেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া উপসচিব (দুদকের পরিচালক ছিলেন) জালাল সাইফুর রহমানের একমাত্র সন্তান সামিন রহমান।
প্রতি মুহূর্তে শূন্যতা অনুভব হয়। আমি ও বাবা দুজনেই খেলাধুলা পছন্দ করতাম। তাই খেলার নানা খবর সারা দিন জমিয়ে রাখতাম।
২০২০ সালের ৬ এপ্রিল রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জালাল সাইফুর রহমান। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনিই প্রথম করোনায় মারা যান। করোনায় প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে অন্তত ২৫ কর্মকর্তা মারা গেছেন।
প্রয়াত জালাল সাইফুর রহমানের স্ত্রী ফাতিমা ফৌজিয়া বকুল ও সন্তান সামিন রহমান থাকেন রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডের একটি বাসায়। গত শুক্রবার ওই বাসায় কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। ফাতিমা ফৌজিয়া বলছিলেন, ‘কাছের মানুষ চলে গেলে কী অবস্থা হয়, বুঝতেই পারছেন!’ এ সময় স্বামীর করোনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে হাসপাতালে নেওয়া—নানা তথ্য জানাচ্ছিলেন, কিন্তু কথা আর শেষ করতে পারলেন না ফাতিমা ফৌজিয়া! এ সময় সামিন রহমান বসার ঘরের দরজা দেখিয়ে বললেন, ‘আমাদের সঙ্গে শেষ দেখা হয় এই দরজায়। বলেছিলাম, “চিন্তা করো না, সুস্থ হয়ে চলে আসবা।” মনে হয়েছিল, হাঁটতে বের হয়েছেন।’
সামিন জানান, ঢাকায় আজিমপুর কবরস্থানে তাঁর বাবাকে দাফন করা হয়। কিন্তু তাঁদের বাসা ‘লকডাউন’ থাকায় তাঁরা বেরোতে পারেননি।
পরে ওই বছরের ঈদুল ফিতরে দিন বাবার কবর প্রথম জিয়ারত করেন। এরপর থেকে ঈদের দিনসহ অন্য বিশেষ দিনে বাবার কবর জিয়ারত করেন। তাই ঈদে দেশের বাড়ি চট্টগ্রামে আর যান না। অথচ বাবা থাকতে অধিকাংশ ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়া হতো।
বাবার অভাব প্রতিনিয়ত বোধ করেন সামিন। তিনি বলেন, ‘প্রতি মুহূর্তে শূন্যতা অনুভব হয়। আমি ও বাবা দুজনেই খেলাধুলা পছন্দ করতাম। তাই খেলার নানা খবর সারা দিন জমিয়ে রাখতাম। বাবা বাসায় এলে তাঁকে বলতাম। বাবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।’
সামিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ছেন। ফাতিমা ফৌজিয়া একটি রেস্তোরাঁ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আছেন।
বাবা জালাল সাইফুর রহমান খুব ব্যস্ত থাকতেন জানিয়ে সামিন বলেন, ‘রমজান মাসে বাবাকে খুব বেশি কাছে পেতাম। বিশেষ করে, ইফতার ও সাহ্রি সাধারণত একসঙ্গেই করা হতো। ইফতার কখনো কখনো আলাদাভাবে করলেও সাহ্রিতে একসঙ্গেই খেতাম। তাই এখন সাহ্রির মুহূর্তে বাবার কথা খুব মনে পড়ে।’