অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমতি দু-এক দিনের মধ্যে

অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় এসেছে ঢাকা শহরের প্রায় অর্ধেক মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে অনেকের মধ্যে দেখা যাচ্ছে অসচেতনতা, যা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানে
ছবি: হাসান রাজা

দু–এক দিনের মধ্যে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরুর অনুমতি দেওয়া হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এই সুযোগ পাবে। এতে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়বে।

শীত মৌসুম এবং করোনা সংক্রমণের সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা সম্পর্কে গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রথম আলোকে এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে দেশব্যাপী প্রচারণাও শুরু করা হবে।

এর এক দিন আগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) যৌথ গবেষণায় বলা হয়, ঢাকা শহরের ৪৫ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে। বস্তিবাসীদের মধ্যে এই হার ৭৪ শতাংশ। গতকাল এই তথ্য দেশের গণমাধ্যমগুলো গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে।

গবেষণার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘গবেষণায় বাস্তব পরিস্থিতি ফুটে ওঠেনি।’ তবে বাস্তব পরিস্থিতি কী, তার ব্যাখ্যাও তিনি দেননি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিতভাবে করোনা সংক্রমণের যে তথ্য প্রচার করে আসছে, তার সঙ্গে গবেষণার তথ্যের পার্থক্য অনেক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ অতিক্রম করেনি। অন্যদিকে যৌথ গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করলে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা প্রায় এক কোটি (ঢাকা শহরের জনসংখ্যা দুই কোটি বিবেচনা করলে)।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১ হাজার ৫৩৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আর এই সময়ে মারা গেছেন ২২ জন। দেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ২৭৫ জনের।

আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির যৌথ গবেষণা প্রকাশের পর অনেকে জানতে চেয়েছেন, আক্রান্ত হওয়া বিপুলসংখ্যক মানুষ কি বুঝতে পারেননি যে তাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন? এর উত্তরে গবেষকেরা বলেছেন, আরটি-পিসিআরে করোনা শনাক্ত হওয়া ৮২ শতাংশের রোগের কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। এঁদের বড় অংশ জানতেন না কখন আক্রান্ত হয়েছেন, কখন সুস্থ হয়েছেন।

করোনা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়েছে, অর্থ-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেসরকারি খাতে চিকিৎসায় প্রচুর অর্থ ব্যয় হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট ওষুধ না থাকায় মানুষ নানা ধরনের ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। কিছু আক্রান্ত ব্যক্তির মানসিক সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে। করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর অনেকে দীর্ঘদিন অবসাদ, ক্ষুধামান্দ্যসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন। বিপুলসংখ্যক মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রভাব সমাজ ও অর্থনীতিতে কী, তা এখনো স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না।

‘এই গবেষণার ভিত্তিতে নীতি নির্ধারণী সুপারিশ করা যাচ্ছে না।’ যে নমুনার ভিত্তিতে গবেষণা হয়েছে, তা ঢাকা শহরের জন্য প্রতিনিধিত্বমূলক নয়। আরও বড় আকারের গবেষণার দরকার।
অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা , স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক

হার্ড ইমিউনিটি (গণরোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে ওঠা) নিয়ে সংশয় আছে, দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে —এমন পরিস্থিতিতে যৌথ গবেষণার তথ্য নীতি নির্ধারণ বা করোনা নিয়ন্ত্রণে কোন কাজে লাগবে? এর উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই গবেষণার ভিত্তিতে নীতি নির্ধারণী সুপারিশ করা যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, যে নমুনার ভিত্তিতে গবেষণা হয়েছে, তা ঢাকা শহরের জন্য প্রতিনিধিত্বমূলক নয়। আরও বড় আকারের গবেষণার দরকার বলে তিনি মনে করেন। ওই গবেষণা প্রকল্প যখন হাতে নেওয়া হয়, তখন মীরজাদী সেব্রিনা আইইডিসিআরের পরিচালক ছিলেন। ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি সভাপতিত্ব করেন।

অন্যদিকে গবেষণা ফলাফল নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘ফলাফল যা–ই হোক, এটা পরিষ্কার যে কেউই আমরা সুরক্ষিত নই। সুরক্ষার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকেই নিতে হবে। শীত মৌসুম ও সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা আছে।’