আলোচনায় চারটি টিকার পরীক্ষা

প্রতীকী ছবি
ছবি: রয়টার্স

দেশে ফ্রান্স, ভারত ও বাংলাদেশে উদ্ভাবিত করোনার টিকার পরীক্ষা হওয়ার কথা চলছে। চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাকের টিকার পরীক্ষা কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার পরীক্ষা ত্বরান্বিত করার জন্য সরকারের উদ্যোগী হওয়া দরকার।

দেশে ফরাসি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্যানোফির টিকার পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) স্যানোফির টিকা নিরাপদ ও কার্যকর কি না, তা পরীক্ষা করার প্রতিষ্ঠান হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হতে যাচ্ছে। বিএসএমএমইউর একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেছেন, আগামী সপ্তাহে কাগজপত্র চূড়ান্ত হবে। এরপর গবেষণাবিধি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) জমা দেওয়া হবে।

বিএসএমএমইউ ছাড়াও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রজন্ম রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সঙ্গেও স্যানোফির টিকার পরীক্ষার বিষয়ে কথা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিএমআরসি এ পর্যন্ত একটি টিকার পরীক্ষার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। সেটি ছিল চীনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের টিকা। এই টিকা নিরাপদ ও সফল কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল আইসিডিডিআরবি। ঢাকার সাতটি হাসপাতালের ৪ হাজার ২০০ স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর টিকার পরীক্ষা নিয়ে আইসিডিডিআরবির প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। একটি পর্যায়ে সিনোভ্যাক টিকার পরীক্ষা চালানোর জন্য অর্থসহায়তা চেয়ে প্রস্তাব দিলে সরকার তা নাকচ করে দেয়। এতে চীনা টিকার পরীক্ষা আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। গতকাল আইসিডিডিআরবির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি ফয়সালা হতে পারে।

তবে টিকার পরীক্ষা নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে, বাস্তবে কাজ তত হয়নি। টিকার পরীক্ষা নিয়ে একধরনের সন্দেহ, অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কোনো কারণে পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে—সেই আশঙ্কায় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ নিয়ে মুখ খুলতে চান না।

এদিকে ভারতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা তাঁদের টিকা পরীক্ষার ব্যাপারে বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। প্রতিষ্ঠানটি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উদ্ভাবন করেছে। টিকার নাম দিয়েছে ‘কোভ্যাক্সিন’।

ভারত বায়োটেকের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আমরা সমগ্র বিধিবিধান মেনে অগ্রসর হওয়ার কথা বলেছি
আবদুল মান্নান , স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিব

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৮ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ভারত বায়োটেকের কর্মকর্তারা তাঁদের টিকা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও গবেষণা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তাঁরা বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে চান।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারত বায়োটেকের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আমরা সমগ্র বিধিবিধান মেনে অগ্রসর হওয়ার কথা বলেছি।’

নিউইয়র্ক টাইমস করোনার টিকা উদ্ভাবনের তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করছে। তারা বলছে, ভারত বায়োটেকের টিকা প্রাণীর শরীরে প্রয়োগ করে সফালতা পাওয়া গেছে। ব্রাজিলের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, ব্রাজিলে পাঁচটি টিকার পরীক্ষা চলছে, এর মধ্যে চীনের সিনোভ্যাকের টিকা সবচেয়ে নিরাপদ। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই টিকার সীমিত ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার কথা তাতে বলা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক তাদের উদ্ভাবিত টিকার ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) পর্যায়ে ৪২টি ও প্রাক্‌-পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর্যায়ে ১৫৬টি টিকা আছে। প্রাক্‌-পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তালিকায় গ্লোব বায়োটেকের তিনটি টিকা আছে। আগামী সপ্তাহে আইসিডিডিআরবির সঙ্গে গ্লোবের একটি সভা হওয়ার কথা আছে বলে গ্লোবের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ওই সভায় আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা গ্লোবের টিকার বৈজ্ঞানিক তথ্যের প্রাথমিক ধারণা নিতে চান।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, টিকার পরীক্ষার যথার্থতা প্রমাণের জন্য ভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ বজায় থাকা দরকার হয়। চীনে সামাজিক সংক্রমণ না থাকায় চীনের টিকার পরীক্ষা হচ্ছে ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্কে।

দেশে করোনা টিকার পরীক্ষা হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পৃথিবীর সেরা প্রতিষ্ঠানগুলো টিকা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। কোনো টিকা পরীক্ষায় কার্যকর ও নিরাপদ প্রমাণিত হলে বাংলাদেশের মানুষ টিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।