ঘুরছে না চাকা, ধারে চলে শ্রমিকদের সংসার
দিনাজপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গেটম্যান হিসেবে কাজ করেন ষষ্ঠী চন্দ্র দাস (৪৮)। টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতি গাড়ি থেকে ১০ টাকা হারে দৈনিক ২৫০-৩০০ টাকা আয় হয় তাঁর। এই আয় দিয়েই তাঁর সংসার চলে। কিন্তু লকডাউনের কারণে দুই সপ্তাহ ধরে জেলার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লকডাউনের তৃতীয় দিন থেকে বাস টার্মিনালের পাশে একটি চায়ের দোকানে ৫০ টাকা দৈনিক মজুরিতে কাজ শুরু করেন তিনি। সেই চায়ের দোকানটিও এখন বন্ধ। আয়রোজগার একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন ধার–দেনা করে সংসার চালাচ্ছেন ষষ্ঠী চন্দ্র।
জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, চালক, সহকারী, সুপারভাইজারসহ জেলায় মোট সাত হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শুধু সদর উপজেলাতেই রয়েছেন তিন হাজারের অধিক শ্রমিক। শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জানান, কাজ না থাকায় এসব বাস ও মিনিবাসশ্রমিকেরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে আছে। বাসচালকদের সহকারীদের চিরচেনা হাঁকডাক নেই। চত্বরের ভেতরে বটগাছের নিচে বসে অলস সময় পার করছেন কয়েকজন শ্রমিক। তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বেরিয়ে এল চলমান লকডাউনে তাঁদের দুর্দশার চিত্র।
জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, চালক, সহকারী, সুপারভাইজারসহ জেলায় মোট সাত হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শুধু সদর উপজেলাতেই রয়েছেন তিন হাজারের অধিক শ্রমিক।
তাঁদের মধ্যে শাহ পরান গাড়ির চালক আব্দুল কাদের বলেন, বাসশ্রমিকরা সহজে অন্য কোনো কাজে মন বসাতে পারেন না। কারও কাছে হাত পাতার অভ্যাসও নেই তাঁদের। এই দুর্দিনে শ্রমিক ইউনিয়ন বা মালিক সমিতি—কেউই তাঁদের খোঁজ রাখছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে করোনা মহামারির শুরুতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের চাল, ডাল, আলু ও তেল বিতরণ করা হয়। এদিকে শ্রমিক ইউনিয়ন তহবিল থেকে শ্রমিকদের দুই দফায় ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কিছু শ্রমিক প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আড়াই হাজার টাকা করে অর্থসহায়তাও পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কয়েকজন শ্রমিক উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘৫–১০ কেজি চাল দিয়ে কয় দিন চলবি ভাই? মাসের পর মাস গাড়ি বন্ধ। চাল–ডাল ছাড়া কি সংসারে আর কুনহ খরচ নাই? তা ছাড়া সব শ্রমিক তো ত্রাণ পায় নাই। পাইছে হাতে গোনা কয়েকজন।’
দিনাজপুর বাস–মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী বলেন, গাড়ি চললে ইউনিয়নের আয় আসে। সংগঠনের প্রায় ২২ লাখ টাকা ছিল। সেই টাকায় গত বছর শ্রমিকদের মেয়ের বিয়েতে সাহায্য, মৃত্যুপরবর্তী ভাতা, দুস্থ ভাতাসহ করোনাকালীন মহামারিতে শ্রমিকদেরকে ১ হাজার করে টাকা ভাতা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সংগঠনের তহবিল শূন্য। জেলা প্রশাসন থেকে একবার ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। আবারও যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, খুব শিগগির দুস্থ শ্রমিকদের ত্রাণসহায়তা দেবেন।
সরকারি প্রণোদনার টাকা বিতরণ বিষয়ে তিনি জানান, মোবাইলের সমস্যার কারণে এখনো ৪০ শতাংশ শ্রমিক ওই প্রণোদনার টাকা পাননি। তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
দিনাজপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের তালিকা পেয়েছি। দু–এক দিনের মধ্যে সদর উপজেলার ২ হাজার ৪০০ শ্রমিককে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হবে। উপজেলা পর্যায়েও ইউএনওরা ত্রাণসহায়তা দেবেন। এ ছাড়া ধারাবাহিকভাবে জেলার বিভিন্ন সংগঠন ও দুস্থ মানুষকে ত্রাণ সহায়তার আওতায় আনার কাজ শুরু হয়েছে।’