ছটফট করে মারাই গেলেন তিনি
শ্বাসকষ্টে ছটফট করছেন মোস্তফা আলী। তাঁর অক্সিজেন দরকার। অস্থির হয়ে ছেলেকে ডাকছেন, ‘উজ্জ্বল রে...।’ ছেলেকে দেখতে না পেয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আবার ডাকেন, ‘উজ্জ্বল রে, তোর বাপ নাই রে...।’ এরপর বুক চাপড়াতে থাকেন। জানালায় তখন অক্সিজেনের একটি নল ঝুলছিল। তবে সঙ্গে মাস্ক ছিল না। মোস্তফা আলী নিজেই নলটা টেনে নিয়ে নাকে লাগিয়ে অক্সিজেন নেওয়ার চেষ্টা করছেন। শুয়ে পড়ছেন, আবার উঠে বসছেন। পাশে অসহায় স্ত্রী শুধু হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন।
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দেখা গেছে এই করুণ দৃশ্য। মোস্তফা আলীর ছেলে উজ্জ্বল আলী বলেন, দুপুরের দিকে তাঁর বাবাকে হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সেখানেও অক্সিজেনের ব্যবস্থা ছিল না। ছটফট করতে করতে ১৫ মিনিট পর তিনি মারা যান।
মোস্তফা আলীর বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার চককাপাশিয়া গ্রামে। রাজশাহী মেডিকেল থেকে এ গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার। মোস্তফা একজন কৃষক। বয়স প্রায় ৬০ বছর। উজ্জ্বল তাঁর বড় ছেলে। তিনি জানান, ৭ জুন রাত আড়াইটার দিকে তাঁর বাবা হঠাৎ অসুস্থ বোধ করেন। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। রাতেই একটা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে যান। তাঁর ভাষায়, ‘সিট নেই’ বলে সেদিন বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয়নি। জরুরি বিভাগে পাঁচ টাকা দিয়ে একটি টিকিট কেটেছিলেন। সেখানেই একটি কাগজে কিছু ওষুধ লিখে বাইরে থেকে কিনে নিতে বলা হয়। ভর্তি না নেওয়ায় ফজরের আজানের সময় বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
উজ্জ্বল বলেন, গতকাল সকাল ছয়টার দিকে আবার অসুস্থ বোধ করলে তাঁর বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সকাল ১০টা। কিন্তু জরুরি বিভাগ থেকে একই কথা বলা হয় ‘সিট নাই।’ জরুরি বিভাগে কোনো ডাক্তারও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। যাঁরা টেবিলে বসে রোগীদের ওয়ার্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন, সেই টেবিল ফাঁকা পড়েছিল। সেখানে বাবাকে বসিয়ে দেন। ডাক্তারের জন্য ছোটাছুটি করার সময় বাবা চিৎকার করে তাঁকে ডাকছিলেন। করছিলেন ছটফট।
উজ্জ্বল বলেন, তিনি কিছুই করতে পারছিলেন না। একজন কর্মচারী এসে তাঁর বাবাকে অক্সিজেন নিতে বলছিলেন। তখন বাবা জানালার সঙ্গে ঝুলে থাকা অক্সিজেনের নলটি নিজেই নাকে ভরে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে বাবাকে ওয়ার্ডে নিতে সক্ষম হন। তখন দুপুর হয়ে গেছে। একটি চৌকি খালি পাওয়া গেলেও অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। চৌকির ওপর বাবা প্রায় ১৫ মিনিট ছটফট করে মারা যান।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী বলেন, জরুরি বিভাগে যে চিকিৎসক দায়িত্বে ছিলেন, তাঁর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, অক্সিজেন লাগবে, এ রকম কোনো রোগী তিনি পাননি। ছটফট করছিলেন, এ রকম একজন রোগী এসেছিলেন। তাঁর অক্সিজেন লেভেল ভালো ছিল।
হয়তো অন্য সমস্যা ছিল। হার্টের সমস্যাও থাকতে পারে। এখন এই রোগী তিনিই কি না, তা–ও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।