তিন সপ্তাহ ধরে রোগী শনাক্তের হার ঊর্ধ্বমুখী

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

তিন সপ্তাহ ধরে দেশে করোনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার ঊর্ধ্বমুখী। চলতি মাসে প্রতিদিনই আগের দিনের চেয়ে শনাক্তের হার বাড়তে দেখা যাচ্ছে। গতকাল শনিবার ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

ঢাকার বাইরেও সংক্রমণ শনাক্তের হার বেড়েই চলেছে। সীমান্তবর্তী, উত্তর ও দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলায় হাসপাতালে চিকিৎসকেরা রোগী সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। শয্যার বিপরীতে বেশিসংখ্যক করোনা রোগী আসছে প্রতিদিন।

গতকাল দেশে করোনার সংক্রমণের ৬৬তম সপ্তাহ (৬–১২ জুন) শেষ হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন রোগী, রোগী শনাক্তের হার, মৃত্যু—সবই বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শেষ হওয়া সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের (৩০ মে–৫ জুন) তুলনায় নতুন রোগী বেড়েছে ২৭ দশমিক ২০ শতাংশ। একই সময়ে মৃত্যু বেড়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, আর রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এখনো কিছু বিধিনিষেধ জারি আছে। লকডাউনের প্রভাবে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছিল। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা তৈরি হয়। ঈদের পর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে দ্রুত সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে।

এখন সীমান্তবর্তী নয় এমন অনেক জেলাতেও সংক্রমণ বাড়ছে। গত ১৪ মে দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপিত হয়। দেশে সংক্রমণের ৬৩তম সপ্তাহে (১৬-২২ মে) মোট পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ৮ শতাংশের কম। এরপর থেকে তা বাড়ছে। গতকাল শেষ হওয়া ৬৬তম সপ্তাহে (৬-১২ জুন) রোগী শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুক্রবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১১ হাজার ৫৯০ জনের। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৬৩৭ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ৮ লাখ ২৪ হাজার ৪৮৬ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তাঁদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৬৪ হাজার ২৪ জন, আর মারা গেছেন ১৩ হাজার ৭১ জন। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাজশাহী, নাটোর, জয়পুরহাট, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা ও নোয়াখালী জেলায় স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে আংশিক লকডাউন চলছে। কিন্তু বেশির ভাগ স্থানেই লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর করা যাচ্ছে না। এদিকে অনেক জেলাতেই করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ৮৭ শয্যার করোনা ইউনিট বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৩৫ শয্যা। তারপরও রোগীর চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। গতকাল সকালে হাসপাতালটিতে ১৪৯ জন করোনা রোগী ছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৭২ করা হয়েছে। তাতেও রোগী সামলানো যাচ্ছে না।

খুলনার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার বাড়ছেই। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে রোগীর চাপ বাড়ছে। হাসপাতালে আর কোনো শয্যা খালি নেই। টানা ১১ দিন শয্যাসংখ্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছে। হাসপাতালের ফোকাল পারসন সুহাস রঞ্জন হালদার প্রথম আলোকে বলেন, করোনা হাসপাতালে আরও ৩০ শয্যা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। এখনো তা হয়নি। তিনি জানান, গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত হাসপাতালের ১০০ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি ছিলেন ১৩১ জন। তাঁদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত রোগী ছিলেন ১১০ জন।

রাজশাহী জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে গত চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত কমেছে। ১৯৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

নাটোর জেলা প্রশাসনের কঠোর লকডাউন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। প্রথম দফায় সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়। কিন্তু জেলার অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাসগুলো হরিশপুর বাইপাস ও দিঘাপতিয়া চেকপোস্ট থেকে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে দেখা যায়।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বাগেরহাটে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়ায় নতুন করে আরও তিনজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে জেলায় ৬১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। ২০৫টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে আক্রান্তের হার ৩১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। নোয়াখালীতেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সংগ্রহ করা ৩৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০২ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। নওগাঁয় ২৩১টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আরও ৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদকপ্রতিনিধিরা]