সুপারিশ আমলে নেয়নি সরকার

করোনার র‌্যাপিড টেস্ট কিট অনুমোদনের বিষয়ে সরকার গঠিত দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি। দেশে করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেনের র‌্যাপিড পরীক্ষা চালুর জোর সুপারিশ করেছে কমিটি।

দেশে বর্তমানে ৯১টি ল্যাবে আরটি–পিসিআরের মাধ্যমে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা চলছে। এই পদ্ধতিতে পরীক্ষার ফল পেতে সময় লাগে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা। দ্রুত ও সহজে পরীক্ষার ফল জানতে পাশের দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে র‌্যাপিড টেস্ট করা হচ্ছে। কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে কি না, সেটি অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে জানা যায়। আর করোনা থেকে যাঁরা সুস্থ হয়েছেন, তাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, তা অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়। বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন ধরে র‌্যাপিড টেস্ট চালুর বিষয়ে বলে আসছেন।

গত সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট শুরু করার ব্যাপারে এ মুহূর্তে কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। তবে অ্যান্টিজেন টেস্টের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, করোনার র‌্যাপিড টেস্ট বিষয়ে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে গত ৯ জুলাই মন্ত্রণালয়ে পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নমুনা পরীক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালার ওপর মতামত দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে। ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক লিয়াকত আলীকে সভাপতি করে গঠিত এই বিশেষজ্ঞ কমিটি ৪ আগস্ট তাদের মতামতসহ নমুনা পরীক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের দপ্তরে পাঠায়।

১৮ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নমুনা সম্প্রসারণ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্তকরণবিষয়ক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি র‌্যাপিড টেস্টের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটিকে ২৩ আগস্টের মধ্যে আরও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে বলা হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি ২৩ আগস্ট তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
নমুনা পরীক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালা কমিটির প্রধান অধ্যাপক লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা জোরালোভাবে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালুর সুপারিশ করেছেন। অ্যান্টিবডি পরীক্ষা এখন শুরু না করা হলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তিনি বলেন, মন্ত্রী যে কথা বলেছেন, সেটি কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত কি না জানা নেই।

প্রায় তিন মাস আগে করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি করোনা শনাক্তে র‌্যাপিড টেস্ট চালুর সুপারিশ করে। গত ৩ জুন কারিগরি পরামর্শক কমিটি করোনা শনাক্তে এত দিন ধরে চলা আরটি–পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালুর পক্ষে মত দেয়। কমিটির বিশেষজ্ঞরা অ্যান্টিবডি পরীক্ষা চালুরও সুপারিশ করেন।

করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরামর্শক কমিটি অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি—দুটি পরীক্ষাই চালুর সুপারিশ করেছে। কিন্তু সরকার তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সরকার কেন অ্যান্টিবডি পরীক্ষা অনুমোদনের সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না, সেটি বুঝতে পারছি না।’

এ বিষয়ে কথা বলতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা সাড়া দেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও জবাব দেননি তাঁরা।

করোনার সংক্রমণের পরিস্থিতি বুঝতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিসিডিআরবি) একটি যৌথ জরিপ করছে। ১০ আগস্ট জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে বলা হয়, রাজধানীর আনুমানিক ৯ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে ৭৮ শতাংশই উপসর্গহীন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নমুনা পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন আক্রান্তের যে সংখ্যা দেয়, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। উপসর্গহীন অনেক রোগী আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে সুস্থও হয়ে গেছেন। সমাজে আসলে কত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, সেটি জানার জন্য দ্রুত অ্যান্টিবডি পরীক্ষা চালু করা প্রয়োজন।