৫ দিনে হাজার মৃত্যু, লাখ রোগী শনাক্ত ১০ দিনে

দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ, গুরুতর অসুস্থ স্বামীর জন্য একটি আইসিইউ বেড পেতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আকুতি জানাচ্ছিলেন এই নারী
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। গত ২৯ জুন শনাক্ত ৯ লাখ ছাড়িয়েছিল। সর্বশেষ এক লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ১০ দিনে। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর এটিই দ্রুততম এক লাখ শনাক্ত রোগীর ঘটনা।

শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমণে আরও ২১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের নিয়ে দেশে করোনা সংক্রমণে মৃত্যু ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে। ৪ জুলাই করোনায় মৃত্যু ১৫ হাজার ছাড়িয়েছিল। সবশেষ এক হাজার মৃত্যু হয়েছে মাত্র পাঁচ দিনে। দেশে চলমান করোনা মহামারিকালে এটি দ্রুততম সময়ে এক হাজার মৃত্যুর রেকর্ড।

কয়েক দিন ধরে দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। চার দিন ধরে দৈনিক ১১ হাজারের বেশি ব্যক্তির সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তও চার দিন ধরে ৩০ শতাংশের বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্তের তিন মাস পর ১৮ জুন তা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর এক মাসের ব্যবধানে ১৮ জুলাই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লাখে। এর পরের এক লাখ রোগী শনাক্ত হয় ১ মাস ৯ দিনে, ২৬ আগস্ট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়ায় তিন লাখ।

গত বছরের ২৬ অক্টোবর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে যায়। সংক্রমিতের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়ায় গত ২০ ডিসেম্বর। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখে পৌঁছাতে সময় লাগে ৫৫ দিন। এরপর ৯৯ দিনে আরও এক লাখ রোগী শনাক্ত হওয়ায় ২৯ মার্চ দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়ায়।

শনাক্তের সংখ্যা ছয় থেকে সাত লাখে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১৬ দিন। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ এপ্রিল সাত লাখ পেরিয়ে যায়। আর রোগীর সংখ্যা সাত থেকে আট লাখে পৌঁছায় গত ৩১ মে, এই লাখ রোগী শনাক্তে সময় লেগেছে ৪৭ দিন। আর রোগী ৮ থেকে ৯ লাখে পৌঁছাতে সময় লাগে ২৯ দিন। এখন করোনার ডেলটা ধরনের দাপটের মধ্যে মাত্র ১০ দিনেই এক লাখ রোগী শনাক্ত হলো।

দ্রুততম হাজার মৃত্যু

গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর তথ্য জানায় সরকার। এরপর গত বছরের ৪ এপ্রিল থেকে প্রতিদিনই করোনায় মৃত্যু হচ্ছে। দেশে প্রথম এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ৯৪ দিনে।

গত ৩১ মার্চ দেশে করোনায় মোট মৃত্যু ৯ হাজার ছাড়িয়েছিল। মৃত্যু ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার ছাড়াতে সময় লেগেছিল ৬৭ দিন। এরপর মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার থেকে ১০ হাজারে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ১৫ দিন। আর ১০ হাজার থেকে ১১ হাজারে পৌঁছায় মাত্র ১০ দিনে, গত ১৫ থেকে ২৫ এপ্রিলে।

এরপর গত ১১ মে করোনায় মৃত্যু ১২ হাজার ছাড়িয়েছিল। মৃত্যু ১১ থেকে ১২ হাজারে পৌঁছায় ১৬ দিনে। গত ১১ জুন করোনায় মৃত্যু ১৩ হাজার ছাড়ায়। মৃতের সংখ্যা ১২ থেকে ১৩ হাজারে পৌঁছেছিল ৩১ দিনে। গত ২৬ জুন করোনায় মৃত্যু ১৪ হাজার ছাড়ায়। মৃত্যু ১৩ থেকে ১৪ হাজার হয় ১৫ দিনে।

করোনায় মৃত্যু ১৫ হাজার ছাড়িয়েছিল ৪ জুলাই। মৃত্যু ১৪ থেকে ১৫ হাজারে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ৮ দিন। সবশেষ এক হাজার মৃত্যুর আগে এটাই ছিল দ্রুততম সময়ে এক হাজার মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড। সেখানে গত পাঁচ দিনে করোনায় প্রাণ হারালেন এক হাজার মানুষ।

এবার করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয় গত ঈদুল ফিতরের পরপরই। ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে রোগী দ্রুত বাড়তে থাকে। পরে তা আশপাশের জেলায়ও ছড়িয়ে পড়ে। এক মাসের ব্যবধানে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা, মৃত্যু ও শনাক্তের হার কয়েক গুণ বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে নতুন শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষ ১২টি দেশের মধ্যে রয়েছে।