রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চত্বরে আইন অমান্য করে লোকজন সড়ক পারাপার হচ্ছে। ফলে একদিকে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এ ছাড়া যত্রতত্র বাস থেকে যাত্রী ওঠানো-নামানোয় বিমানবন্দর চত্বরে যানজট লেগে থাকছে।
গতকাল বুধবার দেখা যায়, বিমানবন্দর চত্বরে লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার হচ্ছে। কেউ হাত উঁচিয়ে, কেউ যানবাহনের সামনে দিয়ে দৌড়ে পার হচ্ছে। অথচ চত্বর থেকে ৬০-৭০ ফুট সামনেই পদচারী-সেতু। কিছুটা হেঁটে যেতে হয় বলে লোকজন ঝুঁকি নিয়ে যেখান-সেখান দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে।
চত্বর এলাকায় দুপুরে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, প্রতি মিনিটে অন্তত ৩০-৩৫ জন এভাবে হাত উঁচিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। সড়কের কয়েক জায়গায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক উত্তর বিভাগের পক্ষ থেকে ‘রাস্তা পারাপারে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করুন’, ‘যত্রতত্র রাস্তা পারাপার দণ্ডনীয় অপরাধ’ এমন সতর্কবাণী লেখা সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। লোকজন তার তোয়াক্কা না করে সতর্কবাণীর সামনে দিয়েই সড়ক পার হচ্ছে।
শিশুসন্তানকে নিয়ে সড়ক পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন হাসান মোল্লা। গাড়ির চাপ কিছুটা কমতেই দৌড় দিলেন। জিজ্ঞাসা করলে বললেন, ‘এমনে রাস্তা পার হওয়া ঠিক না জানি। কিন্তু অতখানি হাঁটা আর বাচ্চা নিয়ে ব্রিজে ওঠা-নামা কষ্ট। একা থাকলে এমনে পার হতাম না।’
বিমানবন্দর চত্বরে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বাস না থামানোর নির্দেশ লেখা দুটি বোর্ড রাখা আছে। দেখা যায়, সেই বোর্ডের সামনেই বাস থামছে, যাত্রী ওঠা-নামা করছে। অথচ এর কিছুটা সামনেই ডিএমপি নির্ধারিত বাস থামানোর জায়গা।
বাসচালক মো. আকতার বলেন, ‘যাত্রী তো সব এইখানে দাঁড়ায় থাকে। পুলিশের ঠিক করা জায়গায় যাত্রী পাওয়া যায় না। তাই এইখানেই থামাই। মাঝেমধ্যে সার্জেন্ট থাকলে সামনে আগায় লোক উঠাই।’
ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দর রেলস্টেশনের কারণে আশকোনা হজ ক্যাম্পে প্রবেশের সড়কটিতে প্রতিদিন ৮০ বার রেলক্রসিংয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। এতে প্রতিদিন সব মিলিয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় চলে যায়। এ সময় বিমানবন্দর চত্বরের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের সড়কে যানবাহন আটকাতে হয়। ফলে গাড়িগুলো বিমানবন্দর চত্বরে চলে যায়।
যানজট কমাতে বিমানবন্দর রেলস্টেশনের সার্ভিস রোডটি দিয়ে বাস ঢোকার ব্যবস্থা করেছিল ট্রাফিক বিভাগ। তাতে যানজট কিছুটা কমেছিল। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেই সার্ভিস রোড দিয়ে বাস ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে। সার্ভিস রোডটি দিয়ে একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা করা হলেও তা মানা হচ্ছে না।
বিমানবন্দর এলাকার ট্রাফিক পরিদর্শক আবদুল আলীম প্রথম আলোকে বলেন, যানজট আগের চেয়ে অনেকটা কমেছে। তবে লোকজন বেপরোয়াভাবে রাস্তা পারাপার হওয়ায় যানবাহন চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়। সকাল-সন্ধ্যা যখন গাড়ির চাপ বেশি থাকে, তখন দড়ি দিয়ে লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।