আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল

প্রথম সারিতে বাঁ থেকে সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম ও শাহ মাহবুবুর রহমান দ্বিতীয় সারিতে বাঁ থেকে অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান
সংগৃহীত

সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের আলোচিত মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রলীগের আটজন কর্মীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। ঘটনার ৬৫ দিন পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।

অভিযোগপত্রে তরুণীকে ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে সরাসরি ধর্ষণের সঙ্গে অভিযুক্ত করা হয়েছে চারজনকে। তাঁরা হলেন সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, শাহ মো. মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি ও অর্জুন লস্কর।

তরুণীকে ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে যাওয়ার আগে একটি বাসায় এক দফা ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় দুজনকে। তাঁরা হলেন মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার মো. আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিজবাউল ইসলাম ওরফে রাজন। ছাত্রাবাসে ধর্ষণ ঘটনায় সহায়তা করা ও ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার অভিযোগে রবিউল হাসান ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুমকে মামলায় অভিযুক্ত করা করা হয়েছে। কোনো পদে না থাকলেও গ্রেপ্তার হওয়া সবাই এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী (২১)। করোনার কারণে বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। ওই রাতেই ধর্ষণের শিকার তরুণীর স্বামী বাদী হয়ে মহানগরের শাহপরান থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে ধর্ষণবিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ষণবিরোধী আইনও সংশোধন করে সরকার।

মামলা দায়েরের পর সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম, শাহ মাহবুবুর রহমান, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান এবং সন্দেহভাজন আসামি মিসবাউর রহমান ও আইনুদ্দিন নামের আরও দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারের পর আটজন আসামিকে পর্যায়ক্রমে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তাঁরা। জবানবন্দিতে প্রধান আসামি সাইফুর, তারেক, শাহ মাহবুবুর ও অর্জুন লস্কর ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। রবিউল ও মাহফুজুর ধর্ষণে সহায়তা করার কথা স্বীকার করেন। সন্দেহভাজন দুই আসামিও আদালতে জবানবন্দি দেন। এর আগে ছয় আসামির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে টেস্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। এতে ছাত্রাবাসে তরুণীকে ধর্ষণ করার প্রমাণ মেলে।

ধর্ষণের রাতে এমসি কলেজে ছাত্রাবাসে প্রধান আসামি সাইফুর রহমানের দখলে থাকা কক্ষে অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে। এই মামলায় সাইফুরের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান ওরফে রনিকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে বলে শাহপরান থানার পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।